-একটি উনিশ বছরের মেয়েকে ধর্ষন করার চেষ্টা করছে,তুই কিছুই বলবি না?
-আমি কি বলবো?
-বাধা দে যা..
-আমার দ্বারা সম্ভব না।তাতে আমার ক্ষতি হতে পারে।কেন পায়ে পাড়া দিয়ে সমস্যা নিজ কাধে নিয়ে আসবো?
-যা না!কিছু কর,মেয়েটার বুকের কাপড় ছিড়ে ফেলছে ওরা। -নয়জন লোকের সাথে আমি কি করবো?আমি তো মার খাবো ফ্রি!
-লোকগুলো মেয়েটার সামনে আপত্তিকর অবস্থা করে ফেলছে।নয়জন পুরুষ আর একজন কিশোরী।এরচেয়ে মেয়েটার মৃত্যুই শ্রেয়।
-মরে যাক,মরলেই শান্তি পাবে!
-তবুও তোর তো একটা দ্বায়িত্ব রয়েছে?
-দ্বায়িত্ব! কিসের দ্বায়িত্ব?এই দ্বায়িত্ব কোথায় গেছিল সেদিন।দুজন লোক আমার বোনকে ধর্ষন করছে,আর পুরো দুনিয়া হা করে দেখেছে।কেউ তো সেদিন কিছু বলেনি।বাবা গেল মামলা করতে,পুলিশ মামলা নিল না!বোন আমার লজ্জায় গলায় ফাসি দিলো।পুলিশ তখন আসছে ময়না তদন্ত করতে!হায় রে!বাবা বোনের শোকে আর সম্মানের কারণে সেও বোনের পথ ধরল।মাও চলে গেল তাদের সাথে।
এলাকার সেই লুইচ্চা নেতারা আমাকে বলে,"খোকা তুমি এত বড় বাড়ি দিয়া কি করবা?"
৫০০টাকা ধরাইয়া দিয়া বাড়ি থেকে আমাকে বের করে দিল!কি দুনিয়া!সেদিন কোন কারো দ্বায়িত্ব ছিল না!
-তুই মেয়েটা কে বাঁচা।তোর মার দোহাই লাগে..
"ব্রেকিং নিউজ,গতকাল মিরপুরে এক বাসে নয়জনের উলঙ্গ লাশ পাওয়া গেছে।কে বা কারা খুন করেছে,জানা যায় নি।তথ্যসুত্র বলছে,লোকগুলো ঐ বাস পরিবহনের কর্মচারী। আর তাদেরকে একটি ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়।পুলিশ এই নিয়ে তদন্ত করছে।বাকি খবর জানতে আমাদের পাশেই থাকুন।"
টিভিটা বন্ধ করে দিল নন্দিনী।তিক্ত লাগছে তার কাছে এই দুনিয়া।
ঠকঠক করে কড়া নাড়লো দরজায় কেউ।নন্দিনী উঠে যেয়ে দরজা খুলল,
-কি চাই?
-আমরা মিরপুর থানা থেকে এসেছি।আমি ওসি...
-তা দেখতেই পাচ্ছি!কি করতে হবে আমাকে?
পুলিশের সাথে এভাবে কথা বলা,অবাক হচ্ছে সিনিয়র ওসি শহিদ উদ্দিন।নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
-গতকাল রাতে বাসে খুনের ঘটনা নিশ্চয়ই জানেন আপনি?কেননা আপনার একমাত্র ছবি সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে?
-হুম,এই যে নেন প্রুফ।গতকাল তারা আমাকে ধর্ষন করতে চেয়েছিল,তাই তারা খুন হয়েছে।
-খুন কি আপনি করেছেন?
-আমাকে দেখে কি মনে হয়?
-তাহলে কে খুন করেছিল?আর কি হয়েছিল সেই রাতে? - শুনুন তাহলে,"ফ্রেন্ডের বাসা থেকে প্যাক্টিকেল শেষ করতে রাত এগারটা বেজে যায়।রাস্তাঘাট ফাকা হয়ে গেছে।কোন বাস নেই।অবশেষে একটি বাস পাওয়া যায়।উঠে পড়ি তাতে।বাসে যারা মারা গেছে তারা এবং আরো একজন ছিল।আমি বরাবরের মতো সামনে মহিলা সিটে বসি।কিছুক্ষণ যাওয়ার পর এক লোক আমাকে বলে,খুকি কোথায় যাচ্ছ?তোমার ওড়না তো অনেক সুন্দর! এই বলে আমার ওড়না টান দেয়।শুরু হয় ধস্তাধস্তি,বাকি লোকগুলো উঠে আসে। আমার জামা ছিড়ে ফেলে, তারাও আপত্তিকর অবস্থায় চলে আসে।আমার মুখ বেধে রেখেছিল,তাই চিৎকার করতে পারছিলাম না।
কিন্তু সে হঠাৎ উঠে আসে।আমি মনে করেছিলাম, সেও তাদের দলে।না,সে তার পকেট থেকে ছুরি বার করে।প্রথমে একজনের গলায়,অপরজনের পেটে,তারপর বুকে।এভাবেই ধর্ষনকারীরা কিছু বুঝে উঠার আগে সে শান্ত ভাবেই তাদের খুন করে,আর কি যেন বিড়বিড় করে বলছিল। ছুরিটা ফেলে দেয়।
তার পরনের শার্ট খুলে আমাকে দেয় এবং বলে,
-বাসায় চলে যাও।আর কেউ কিছু করবে না।বাসায় যেয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে আধ ঘন্টা সময় নিয়ে গোসল করবে।আর তোমার জামাকাপড় খুলে একটি পলিথিনে রাখবে,কাল পুলিশকে দিবে।সুইসাইড করার কথা ভাববে না।যাও.."
আমি চলে আসি বাসায়।
স্টোরি শুনে অবাক হয়ে যায় ওসি শহিদ উদ্দিন। বলে, -নাম কি ছেলেটার?জানো কিছু?
নন্দিনী শান্ত ভাবেই বলে,
-হুম জিজ্ঞাসা করেছিলাম বলেছে অকৃ।
-অকৃ!ভেরি ইন্টারেস্টিং ন্যাম।বয়স কি রকম হবে?
-আঠার থেকে কুড়ি।
-হুম গুড।
-আপনার নাম কি?আপনাকেও থানায় যেতে হবে।এই খুনের সাথে আপনিও জড়িত আছেন।
-তা জানি।নাম আমার জেনে যান।নন্দিনী।ছেলেটা আমাকে আরো কিছু বলে গেছে আপনাদের বলতে।
-কি বলেছে?
-বলেছে,"পুলিশকে বলবেন আপনার নাম মিডিয়ায় এবং আপনাকে এই মামলা যুক্ত না করে।শুধু আমার নাম বলবেন!" -আচ্ছা আসি আজ।
ওসি শহিদ উদ্দিন আর তার সহকারী বের হয়ে আসে নন্দিনীর বাসা থেকে।সহকারী শামসুল বলে,
-স্যার অকৃর কথায় কি মেয়েটাকে ছেড়ে দিবেন?
-তুমি কি চাও পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে থাকতে বা এই সুন্দর চেহারা পুড়ে দিতে?
-নো স্যার।তাহলে ওই মেয়ের নাম মুখে নিবে না।অকৃ ইজ ড্যাঞ্জারাস ম্যান। -তাই বলে কি তাকে ধরা হবে না? -তাকে কেউ দেখেনি।কে সে কেউ জানে না।তবে অকৃ খুন করেছে সবাই জানে।এই নিয়ে তার হলো ৫৭তম খুন।এটা পুলিশের হিসাব।বাকিটা ওপরওয়ালায় জানে। -এরকম খুনিকে তো আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। -নতুন এসেছ চেপে যাও।বহুত রঙ আছে তাতে।শুনেছি আমাদের এক সিনিয়র তাকে নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখছেন।তিনি অকৃকে দেখেছেন,তাকে ধরে রাখতে পারেন নি।কোন প্রমাণ ছিল না তার হাতে।তাহলে তো আমরা রাস্তার বিড়াল.. -কে এই অকৃ? কি তার পরিচয়? -অকৃ! হি ইজ আ সিরিয়াল কিলার! ______________________________________________
-তের বছর মেয়ের পেটে তিন মাসের বাচ্চা!মা আর মেয়েটা আজ মারা যাইবো। -কই আছে ওরা? -স্টেশনে।ট্রেনের নিচে পড়ে দুনিয়াকে ছেড়ে যাবে! -হু! -কি ভাবছিস? -ভাবছি খুন করা ছেড়ে দিবো!আর কত? -তোর বোনের ইচ্ছা... -হুম সেই প্রতিশোধটা নিয়ে নিলে হয়তো এত খুন করতে হতো না!আচ্ছা বলতো,আজ আকাশে তারা আছে,চাঁদ নেই কেন? - চাঁদ আছে,হয়তো তুই দেখছিস না বা মেঘের আড়ালে আছে। -জানিস মা বলত,"বাবা তুমি একদিন বড় হয়ে ঐ যে পশ্চিম আকাশে বড় তারাটা দেখছো,সেই রকম হবে।" আমি বলেছিলাম,"আর ছোট তারাগুলো মা,ঐ চাঁদ?"মা বলল,"সেগুলো মানুষ আর চাঁদটা হলাম আমি!তোমাকে আলো দিবো,তুমি বেচে থাকবে।" বাবা সেদিন বলেছিল,"আমার ছেলে মহাপুরুষ হবে এবং মেয়ে হবে জগত সেরা ডাক্তার!" বোনটা তো চলে গেল।বাবা,মার ইচ্ছা কি পূরণ করতে পারবো? -অকৃ,তুমি পারবে।তোমার বাবা,মা আমায় তাই বলেছে। -শোন,তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে কবে? -যখন প্রতিশোধ শেষ হবে! তেজগাও রেলস্টেশন।ছোট্ট একটি স্টেশন।লাল বাতিগুলো মিটমিট করে জ্বলছে।ফাকা স্টেশন।তবুও কিছু লোক হাটা চলা করছে।লাল আলো আর আঁধারের খেলার মাঝে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে গোপনে। -খালা,মরে গেলেই কি প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে? শাহানারা বেগম হকচকিয়ে গেল।ভেজা চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখে বিশ বয়সের এক যুবক।সে কি বলবে খুজে পাচ্ছে না।স্টেশনের এক কোণে বসে ছিল সে মেয়েকে নিয়ে,সময় আর সুযোগের অপেক্ষায়।কেউ তো তাকে দেখার কথা নয়।তাহলে কিভাবে... -খালা,মেয়েটার নাম কি? -তুলি। -পুলিশের কাছে গেছিলেন? -না বাবা।কে তুমি? -আমি হয়তো আপনার ছেলে। -আমার ছেলে? -অসহায় মায়েদের ছেলে আমি আর বোনদের ভাই।তাদের সাহায্য করাই আমার কর্ম।এই দুনিয়ায় যার বিচার নেই, তার বিচার উপরওয়ালায় করে। -তা বাবা জানি।কিন্তু এই কলঙ্ক নিয়ে বেচে থেকে লাভ কি বলো? -লাভ,লোকসান বুঝি না।তবে মৃত্যু এর বিচার করে না।তা বলেন দেখি কিভাবে হলো এই সব! -তুমি শুনে কি করবা?আমার মেয়ের ইজ্জত ফিরাইয়া দিতে পারবে?না তার বিচার করতে পারবে? -ইজ্জত দিতে পারবো না।তবে বিচার করে দিতে পারবো,শেষ বিচার! -কে তুমি বাবা? -আপনার ছেলে! দুই হাত দিয়ে চোখে মুছে ফেলল শাহানারা বেগম।বলতে লাগল তার কষ্টের কথা, "আমি কাজ করতাম মোহসিন মিয়ার বাড়ি।কাজের বুয়া আমি।স্বামী মারা গেছে অনেক আগে।তাই মেয়েটারে আমার সাথে নিয়ে যেতাম।প্রতিদিনের মতো সেদিনও নিয়ে যাই।মোহসিন মিয়া মেয়েটারে ডাক দেয়।তুলি যায়।আমি রান্না করতে ছিলাম আপার সাথে।মানে মোহসিন মিয়ার বউ। তুলি অনেকক্ষণ হলো আসে না।ভাবলাম খেলতাছে বা টিভি দেখতাছে।হঠাৎ মেয়েটার চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পাই।আমি আর আপা দৌড়ে যাই।দেখি আমার মেয়ের সাথে মোহসিন মিয়া....." নিজের কলঙ্ক বলতে যেয়ে কেদে ফেলে শাহানারা বেগম।অকৃ স্বান্তনা দিয়ে বলে, -মা,পুরোটা শুনতে চাই।বিচার কিন্তু হয়ে যাবে। -তুমি আমারে মা বলছো?শোনো, "আমি আর আপা বাধা দিতে যাই।আমাদের পিস্তল দিয়ে ভয় দেখায় মোহসিন মিয়া।বলে আমাদের মেরে ফেলবে।এরপর প্রতিদিন করতো মেয়ের উপর নির্যাতন।যেদিন তুলিকে নিয়ে না যেতাম আমারে মারতো,আর খারাপ ভাষায় গালাগালি করতো!পিস্তলের ভয় দেখাইতো।তার ভাতিজায় আবার নেতা,তাই কারো কিছু বলতে পারতাম না।তাদের নামে খুনের মামলা আছে শুনছি,তাই খুব ভয় পেতাম। কিন্তু সেদিন শুনতে পেলাম মেয়েটার পেটে বাচ্চা।তাই আমারে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিল।বলল,কাউকে বললে মেরে ফেলবে আর ওই বাড়িতে যেতে না।আপায় কাদতে কাদতে কিছু টাকা দিয়ে বলল,বোন তুই যা গা।মেয়েটার চিকিৎসা করা।আর আসিস না। আমারে বস্তির থেকেও বের করে দিল।অপমান করে।লোক জানাজানি হলো,আমি আর মেয়েটা নাকি খারাপ কাজ করি।তাই বেচে থেকে লাভ কি?মরতে আসছি,কলঙ্ক থেকে মুক্তির জন্য !" -মা,মেয়েটার চিকিৎসা করাইছো? -না বাবা। -মা আমি যা বলি,তা মানবা?তোমার বিচার কিন্তু কবুল হইছে উপরওয়ালার দরবারে! -কি করতে হইবো? -এখন বস্তিতে ফিরে যাও।কাল মেয়েটার চিকিৎসা করাবে আর পুলিশ এসে কিছু টাকা দিবো।সেটা নিয়ে গ্রামে বাড়ি চলে যেয়ে মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করে দিবা,পারবা না মা? -হ্যা, বাবা পারবো!কিন্তু তোমার পরিচয় দিলে না? -আমি তোমার ছেলে হই মা!এখন আসো চা দিয়ে রুটি খাই।আমার কাছে কিছু টাকা আছে,তিনজনের হয়ে যাবে। সূর্যের আলো বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে মানুষের ভীড়।সবার ইচ্ছে,মোহসিন মিয়ার শেষ পরিণাম এক পলক দেখা।কি হয়েছে তার!কেউ তার গলায় ছুরি দিয়ে কণ্ঠনালি বের করে ফেলেছে এবং তার বুকে লম্বা ভাবে কেটে ফেলেছে। তার লাশের পাশের দেয়ালে তার রক্ত দিয়ে লেখা,"তুলির জন্য দশ লক্ষ টাকা চাই!" -কি ডিটেকটিভ আকাশ,কিছু পেলেন? -না,কোন সূত্রই নেই। -আগেই বলেছিলাম,এটার কার কাজ! -তবুও দেয়ালের এই লেখার ফিঙ্গার প্রিন্ট,তাতে কিছু পাওয়া যাবে। -আশা ছেড়ে দেন।পাওয়া যাবে না। -ওসি সাব,আপনি কি এই খুনের সাথে জড়িত?আপনার কথায় রহস্য আছে মনে হচ্ছে। -নতুন আসছেন এই এলাকায়, তাই বলছেন।দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করি,কিভাবে কি হলো! তেজগাও থানার ওসি শাহিন।বেশ নাম,ডাক থাকলেও কিছু আসামি তিনি ধরতে পারেন নি।তার মাঝে এই খুনি হলো অন্যতম।দারোয়ানের বয়স বেশি না,যুবক মানুষ।ঠোঁটে পানের দাগ এখনও লেগে আছে।যেন বড় ধরনের এক পানখোর। -কাল রাতে কি হয়েছিল?তুমি কিছু দেখছ? -স্যার আমি কিছুই দেখিনি।শুধু শেষ রাতে স্যার এসে বলে,গেট খোল জসিম নতুন মাল আসছে!আমি গেট খুলে দেই,কিন্তু স্যার ফিরেন নাই।ফজরের পর বের হয়ে দেখি স্যারের এই অবস্থা! দারোয়ান জসিম নিজের মালিকের এই অবস্থা দেখে কাদতে লাগল। -বুঝলেন ডিটেকটিভ আকাশ,কোন সাক্ষী নেই।তবে একজন সাক্ষী আছে,কিন্তু তার সাক্ষী গ্রহণযোগ্য নয়। -কে সে স্যার? -তুলির মতো তাকেও ধর্ষন করেছিল মোহসিন মিয়া।অপবাদ দিয়ে বের করে দেয়।ফলে পাগল হয়ে গেছে।ঐ দেখেন রাস্তার ওপাশে। রাস্তার ওপাশে জীর্ণ শীর্ণ পোশাকে এক মহিলা বসে আছে।মহিলা নয়,জবা পাগলি।ওসি শাহিন বলতে লাগল, -আগে কয়েকবার এখানে এসেছিলাম।দেখি পাগলিটা এখানেই বসে থাকে।চলেন যাই।শুনে আসি কি হয়েছিল? ওসি শাহিন এবং ডিটেকটিভ আকাশ জবা পাগলির কাছে গেল।শাহিন বলল, -জবা আপা,কাল রাতে এখানে কি হয়েছিল?কে মেরেছে মোহসিন মিয়াকে? জবা পাগলি চুপচাপ বসেছিল।প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ ওসি সাহেবের এক পলক তাকিয়ে থাকল।তারপর একটা হাসি দিয়ে, -প্রতিশোধ সাব,প্রতিশোধ!ওরে কাল রাতে আজরাইল মাইরা লাইসে।প্রতিশোধ নিছে। -ছেলেটাকে দেখছ তুমি? জবা আবার হাসি দিয়ে বলে, -ওকে দেখতে হয় না সাব।ওর ছায়া বলে দেয় ও কে!আগুন,ও আগুন! -বুঝলেন আকাশ,ওকে আমাদের চিনতে হয় না!ওর পরিচয় ও নিজেই দেয়।খুনের স্টাইল বলে দেয় কে মেরেছে! -নাম কি স্যার ওর? আর তুলিকে কি টাকা দেওয়া হবে? -আপনি কি আরো একটা খুন দেখতে চান? -কেন? -তাহলে টাকা তো দিতে হবে। -বুঝলাম,কিন্তু কে এই সিরিয়াল কিলার? -সকল ধর্ষিতা নারীদের ছেলে অথবা ভাই! -নাম কি ওর? -অকৃ দ্য সিরিয়াল কিলার! ______________________________________________
- আসামির নাম কি? -অকৃ! ওসির হাত কেপে কলম পড়ে গেল।গলা শুকিয়ে আসছে,তবুও ঢোক গিলে বলল, -আপনি কি সত্যিই অকৃর নামে মামলা করতে এসেছেন? -হ্যা,সত্যি।সেই সিরিয়াল কিলারের নামে! ওসি এবার ভয় পেয়ে গেলে।পাশে রাখা পানির বোতল থেকে পানি খেয়ে নিলেন।কপালে ঘাম জমছে,তা রুমাল দিয়ে মুছে নিলেন।ভালো মতো দেখলেন মেয়েটাকে! -নাম কি আপনার? -মিতু।আপনি সম্ভবত ভয় পাচ্ছেন।অকৃ কোন গ্যাংস্টার না!ওর কোন টিম নেই।আপনি মামলা না নিলে আমি আসি,আদালতে মামলা করবো। -না না না,বসুন।তার অপরাধ কি? -আমাকে ধর্ষন করেছে। -কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে? -হ্যা,সকল পরীক্ষা আমি দিয়ে এসেছি।রেজাল্ট দ্রুত আসবে আর এই যে ধর্ষন অবস্থায় আমার পোষাক!আর কিছু? ওসি সাহেবের বুকের হার্টবিট বেড়ে গেছে।ধর্ষকের মৃত্যুর নায়ক আজ ধর্ষক।বিশ্বাস করতে পারছেন না।তবুও মামলা নিতে হবে।না হলে আইন বিলে কিছু থাকবে না। -আপনি তো পুরো প্রস্তুতি নিয়েই আসামিকে আটকাচ্ছেন।কিসে পড়েন? -অনার্স ফার্স্ট ইয়ার! -এডুকেটেড!দারুণ!আপনার সাথে তার সম্পর্ক কি?আর কি কি হয়েছিল,জবানবন্দি দেন! -"অকৃর আমার ক্লাসমেট।ও আমার খুব ভালো বন্ধুও ছিল।অকৃ ওর সবকিছুই আমার সাথে শেয়ার করতো।ওর চিলেকোঠায় রোজ আমরা আড্ডা দিতাম।ভালোই চলছিল আমাদের বন্ধুত্ব,কিন্তু ও আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়! কিন্তু অকৃ ছোট পরিবারের ছেলে।নেই ওর কোন আত্মীয় বা পরিচয়।আবার অকৃ সিরিয়াল কিলার নামে খ্যাত।আমি একটি বিত্তবানের মেয়ে।বাবার অনেক সম্মান কিভাবে ওর সাথে আমার মিলে? না,করে দেই অকৃকে।ও কান্নাকাটি করে।পরে আবার ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু গতকাল আমাকে ওর চিলেকোঠায় ডাকে, আমি যাই।অতঃপর জোরপূর্বক ভাবে আমার সাথে..." মিতু থেমে যায়।মেয়েটার চোখে পানি।চোখের কাজল, পানির সাথে মিশে গড়িয়ে পড়ে। -হুম বুঝলাম।আপনি যেহেতু অকৃর বন্ধু ছিলেন।তাহলে তাকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে,তা নিশ্চয়ই জানেন! -হ্যা,চার নাম্বার রোডে তেতাল্লিশ নাম্বার বাড়ির চিলেকোঠায়! -পালাবে না? -নো,সম্ভবত পালাবে না।ওর ধারণা আমি পুলিশকে বলবো না।আর যদিও বলি,তাহলে পুলিশ আসবে না!অকৃ নিজেকে মহাপুরুষ ভাবে! দুপুর দুইটা।এলাকা নিস্তব্ধ, কেউ অফিসে বিশ্রাম নিচ্ছে,অথবা কেউবা বাসায় ঘুমাচ্ছে।তেতাল্লিশ নাম্বার বাড়ির চারপাশের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।কিন্তু তবুও মানুষ সেই মহাপুরুষকে একবার দেখার জন্য ভীড় করছে। ওসি সাহেব আবেদন করে র্যাবের সাহায্য নিয়েছেন।বুকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট আর হাতে রাইফেল।তেতাল্লিশ নাম্বার বাড়িটা ঘিরে রাখা হয়েছে।যেন যুদ্ধের প্রস্তুতি! টিম ক্যাপ্টেন মাইকে এ্যানাউন্স করলেন, "অকৃ,আপনাকে বলা হচ্ছে।আপনি আত্মসমর্পণ করুন।কোন রকম ঝামেলা...." ঘোষণা শেষ হয়নি।লোহার গেট দিয়ে বের হয়ে এলো এক যুবক।সবাই বন্দুক তাক করে আছে তার দিকে,বিপদজনক কিছু ঘটার আগেই গুলি করার আদেশ আছে।পায়ে চটি জুতা,পরনে কালো জিন্স আর খয়েরি কালারের শার্ট।হাত দুটো উপরে তোলা। ক্যাপ্টেন আবার বললেন, "আপনার কাছে কোন বিপদজনক কিছু থাকলে ফেলে দিন!" শান্তস্বরে অকৃ বলল, -আমার কাছে কোন কিছুই নেই।শুধু ডান পকেটে বিশ টাকা আছে। ওসি সাহেব এগিয়ে গেলেন।হাতে বন্দুক। -আপনাকে এ্যারেস্ট করা হচ্ছে ধর্ষনের মামলায়। -শুধু ধর্ষনের মামলায়?বাকিগুলোর কি হবে? -সেগুলোর খবর আমি জানি না।আমার কাছে এই একটি মামলা আছে,আপনাকে ধরার জন্য।আপনি কি সত্যিই অকৃ? -যে মামলা করেছে তাকেই জিজ্ঞাসা করুন না! হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে পুলিশ অকৃকে প্রিজন ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে গেল।হাজার হাজার মানুষ তাকিয়ে আছে সেদিকে। পরদিন টিভি নিউজ,পত্রিকায় একটাই খবর "অকৃ!" "সিরিয়াল কিলার অকৃ গ্রেফতার!" "ধর্ষক অকৃর মৃত্যু চাই!" "ধর্ষকের আজরাইল ধর্ষক!" শিরোনাম আর শিরোনামে পত্রিকায়! আদালত ঘোষণা দিল, "এই আদালত সিরিয়াল কিলার অকৃকে ৭৬ জনকে খুন,২ জনকে খুন করার চেষ্টা করা এবং ১ নারীকে ধর্ষন করা নিয়ে মোট ৮৩টি মামলায়, ১১ জনের একটি বিশেষ টিমের ১১টি গুলিতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার আদেশ দিচ্ছে।কেননা সে দেশের এবং বাঙালি জাতি উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।তার পক্ষ থেকে কোন আপিল গ্রহণযোগ্য নয়। দ্য কেস ইজ ক্লোজড!" অকৃ এক জঙ্গলের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে,হাত পিছনে নিয়ে পরিয়ে রাখা হয়েছে হ্যান্ডকাপ।চারপাশে ১১জন কালো পোশাক পরিহিত একটি দল তাকে ঘিরে আছে।তারা পুলিশ না র্যাব বুঝা যাচ্ছে না।গ্রুপ ক্যাপ্টেন বলেন, -আপনার শেষ ইচ্ছে.. -সকল ধর্ষকের মৃত্যু চাই! একজন সময় দেখে বলে উঠল, -ফায়ার! চোখের পলকে এক এক করে এগারটি গুলি তার বুকে,পিঠে,পায়ে ঢুকে গেল।ঢলে পড়ল অকৃর শরীর মাটিতে,ধপাশ করে পড়ে গেল সে।দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।নীল আকাশে চিল উড়ছে।কালো কাকগুলো এসে তার দেহ থেকে বের হওয়া রক্ত খাচ্ছে।একটি নেড়ি কুকুর তার বুকের উপর চেপে বসল।খুবলে খুবলে অকৃর মাংস খাচ্ছে।চিলটা এখনও আকাশে উড়ছে। কুকুরটা যখন মাংস খেতে খেতে তার হৃদপিন্ড বের করে ফেলল,তখন চিলটা উড়ে এসে বসল তার বুকে।তার দাড়ালো ঠোঁট দিয়ে সাহসী পিন্ডটা হেচকা টান দিয়ে বের করে, নিয়ে উড়ে গেল। ব্যথায় ককিয়ে উঠল অকৃ।মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে,তবুও সে ঘামছে।ঘামছে তো ঘামছে।ভিজে সে পুরো একাকার।এটি কি স্বপ্ন ছিল না,দুঃস্বপ্ন? বাইরে আলো ফুটেছে।শহরের কাকগুলো ডাকছে,চড়ুই কিচিরমিচির করছে।সকালের ঠান্ডা বাতাস লাগছে তার গায়ে।তবুও সে ঘামছে।ভয়ে!মৃত্যুর ভয়ে! অকৃর বের হওয়ার সময় হয়ে গেছে।এখনই তাকে বের হতে হবে।শান্তি পাচ্ছে না সে,অস্থিরতা কাজ করছে তার মাঝে!কানে সামনে তাকে কে যেন বলছে, "অকৃ,তুই পালিয়ে যা.." #চতুর্থ_পর্ব -কত? নিশিকন্যা নিপা হালকা হাসছিল।হঠাৎ ছেলেটা যে এভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করবে বুঝতে পারেনি।হয়তো ছেলেটা এই পথে নতুন!রাত এগারোটা,ল্যামপোস্টের আলো জ্বলছে।অল্প বয়সের ছেলেটা সাদা একটি শার্ট পরে আছে,দেখতে সুন্দরই লাগছে!কি যেন একটা একটু পর পর খাচ্ছে।তাকে অবাক করে দিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করল, -কত নেন একরাত? -কেউ ৫০০ দেয়, কেউবা ১০০০।তোমার যা ইচ্ছে দিতে পারো! -এই নেন ২০০০ টাকা।আজ বাসায় চলে যান,আম্মুর পাশে থাকুন দুদিন! -ফ্রি টাকা দিবে কেন?তোমার আমাকে প্রয়োজন নেই? -না,দুদিন পাপ থেকে বিরত থাকুন।আমার কাছে আর নেই,থাকলে দিয়ে দিতাম। -তুমি কে?কেনইবা আমাকে এভাবে টাকা দিচ্ছো? -হয়তো আমি আপনার ভাই।ভাই হিসেবে বোনকে টাকা দিতে তো পারি। -নাম কি তোমার? -অকৃ! -অকৃ?তুমি সেই অকৃ?সিরিয়াল কিলার?খুনি? -আমি কোন খুনি নই।আমি পাপের বিচার করি। -সামনে একটা বেঞ্চ আছে,বসবে? নিপা অকৃকে দেখে নিল।নিষ্পাপ মুখ তার।সে নাকি সিরিয়াল কিলার!অদ্ভুত এই দুনিয়া!দুনিয়াটা কত নিষ্ঠুর! -বাদাম খাবেন বুবু?আমি আপনাকে বুবু বলে ডাকতে পারি? -তোমার বোন নেই? -বুবু,আমার কেউই নেই।একা আমি এই দুনিয়ায়! -বাবা,মা? -সবাই একসাথেই চলে গেছে ওপারে, জানো বুবু। -কিভাবে? -আমার বোনের নাম ছিল কামিনী।কবি কামিনী রায়ের মতোই ছিল।কি সুন্দর ভাবে কবিতা আবৃত্তি করতো!আমাকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতো।ও পড়তো দশম শ্রেণীতে।এলাকায় একমাত্র বৃত্তি পাওয়া ছাত্রী,খুব মেধাবী।আমি ছোট ছিলাম বলে আমাকে খুব আদর করতো। কিন্তু আমাদের আনন্দে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এলাকার মাতব্বর।তার ছেলে ছিল বখাটে।আমার বোনকে পছন্দ করতো।মাতব্বর একদিন এসে বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।বাবা না করে দেয়।এরপর সবঠিক ছিল। কিন্তু সেই ছেলে বোনকে রাস্তায়,স্কুলের সামনে বারবার খারাপ প্রস্তাব দিতো।বাড়িতে সবাই আমরা সেটা জানতাম।কিন্তু একদিন বোনকে স্কুলের সামনে থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়,ধর্ষন করে। তারপর অনেক কিছুই ঘটে, বাবা মামলা করতে যায়।পুলিশ মামলা নেয় না।এলাকায় সবাই বোনকে খারাপ বলতে থাকে।আমি বোনের সাথেই ঘুমাতাম। সেদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি বোন ফ্যানের সাথে ঝুলছে।আত্মহত্যা করে।তার চোখ দুটো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল! বলছিল,"ভাই প্রতিশোধ নিবি না!" চারদিকে আমি বোনের সেই চোখ দুটো দেখতে পাই আর আমাকে বলে,"ভাই প্রতিশোধ!" তারপর বাবাও সম্মানের কারণে বোনের পথ ধরে।মা,বাবা আর বোনের শোকে সেও চলে যায়।আমি হয়ে যাই এতিম। মাতব্বর আমাকে ৫০০টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে চলে যেতে।বাড়িটা তারা দখল করে। সেই রাতে আমি মাতব্বরকে হত্যা করি,কিন্তু বেচে যায় তার ছেলে।পালিয়ে যায় আমেরিকায়।আর হাতের নাগালে পাইনি।সেই থেকে আমি প্রতিশোধের নেশায় পথে পথে.... নিপা তাকিয়ে থাকে অকৃর দিকে।অকৃর চোখ দিয়ে অবিরাম অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।যেন এর শেষ নেই! -বুবু তুমি কেন এই পথে রোজ থাকো? -তোমার বোনের মতো আমিও হতভাগা।তাই পথে পথে আজ। -কেন? কে নামিয়েছে তোমায় এই পথে? -বেশিদিন নয়,এই একমাস আগে।বাবা,মা শখ করে নাম রেখেছিল আমার,নিপা।কলেজে পড়তাম।বাবা একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতো।বাবা,মার একমাত্র সন্তান আমি।আমাদের দুবেলা খেয়ে ভালোই চলছিল।কিন্তু একদিন রোড এক্সিডেন্টে বাবা মারা যায়।এই খবর শুনে মা ব্রেন স্ট্রোক করে।আমরা মধ্যবিত্ত ছিলাম,টাকা পয়সা কিছু ছিল।যা ছিল মার চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে যায়।আত্মীয়স্বজনরা আমাদের আর খোজ খবর নেয় না।পরিবারের দ্বায়িত্ব আমাকে নিতে হয়। গার্মেন্টসে চাকরি পাই।৬ হাজার টাকা বেতন।একদিন ম্যানেজার সাহেব ডাক দিয়ে একটি রুমে কাজ দেন।আমি কাজ করতে থাকি।আমাদের ছুটি হয়ে যায়।ম্যানেজার বলে,কাজটা শেষ করে যেতে। এক্সট্রা টাকা দিবে। সবাই চলে যাওয়ার পর ম্যানেজার আমার সাথে জোর করে.... নিপাও কেদে ফেলে।নিজের ইজ্জতের কথা মুখ ফুটে বলা কতটা লজ্জার কথা!অকৃ বলে, -বুবু,তুমি পুলিশের কাছে যাওনি? -গেছিলাম ভাই।ওসি বলে, "তোগো রে আমি চিনি।দিনে বেলা গার্মেন্টসের লোকদের নাচাস,আর রাইতে পথ নাচাস।যা যা ভাগ.. আর শোন জোনাকিরে তো চিনিস।ও আমার কাছে আয়ে,মাঝে মাঝে তুই আসিস।ভালো টাকা পাবি!" -জোনাকি কে বুবু? তোমার কাছে কোন প্রমাণ ছিল না? -না ভাই,আমি বুঝতে পারিনি।জোনাকি হলো এই এলাকার পতিতাদের সর্দার। তারপর সেই কাজটা ছেড়ে দেই।অন্য কাজ খোজ করি।পাই না।মার জন্য ঔষধ প্রয়োজন হয়।একদিন রাতে এক ভদ্রলোক বলে,৩হাজার টাকায় হবে? সেই থেকে আমার শুরু এই পথসেবা.. -বুবু, তুমি এই কাজ ছেড়ে দিবা? আমার কাছে একটা টিউশনি আছে।আমাদের বাড়ির বাড়িওয়ালার মেয়েরে পড়াবে।আমি তোমাকে দিয়ে দিবো। -আমার জন্য এত কিছু করবে কেন ভাই? -তোমার ভাই যে তাই!বুবু তুমি বিয়ে করবে।আমি একটি চিঠি লিখলে,তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে।ভাগ্যে থাকলে পুলিশ অফিসারও পেতে পারো! -না রে ভাই,পুলিশকে আমি ঘৃণা করি। -আচ্ছা ঠিক আছে।আমি বলে দিবো,ভালো ছেলে দেওয়ার জন্য। -কার কাছে বলবে ভাই? -আমার লোক আছে।খুব ভালো লোক।কিন্তু কারো কাছে আমার নাম বলবে না।বলবে আমার ভালো নাম! -তোমার ভালো নাম কি? রাত দুইটা।আকাশে মেঘ জমছে।ঠান্ডা বাতাস প্রকৃতির মাঝে বইছে।এই সময় অকৃর হাটতে ভালো লাগে।সে হাটছে... -কোথায় যাচ্ছো? -থানায়। -কেন?খুন করতে ওসিকে? -দেখা সাক্ষাৎ করে আসি।অনেক দিন হলো থানায় যাই না। -তোমার প্রতিশোধ নেওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। -তোমায় কে বলল? -তোমার অনুমান,কারণ তুমি মহাপুরুষ! সকাল আটটা।থানার সামনে সাংবাদিকদের ভীড়।থানার ওসি খুন হয়েছে।সাংবাদিকদের সাথে মিশে আছে আম জনতা।আইজিপির গাড়ি মাত্র এসেছে।এত বড় থানার মাঝে,এত পুলিশের নিরাপত্তার মাঝে ওসি খুন।থানার সবাই ভয়ে আছে।গলা কেটে,বুকের রক্ত দিয়ে টেবিলের কাচে লেখা, "বিচার চাইতে এসেছিলাম! বিচার করো নি কেন?" আইজিপি অফিসার ওসির লাশটা দেখে বলল, -সিরিয়াল কিলার!তোমরা কোথায় ছিলে সবাই? থানার এক পুলিশ অফিসার বলল, -স্যার কিছু লোকদের বস্তিতে পাঠিয়ে ছিলেন বাংলা আনার জন্য! -থানায় মদ!খুব ইন্টারেস্টিং!বাকিরা? -কেউ গিয়েছিল বিরিয়ানি আনতে।তিনি রোজ রাতে এই রকম খাবার খান।আর বাকি আমরা ভিতরে,কেননা.... -কেননা কি? পুলিশ অফিসার ভয়ে কাপছে। -কেননা স্যার,প্রতি রাতে তার কাছে এক মহিলা আসে। -ওয়াও!থানার ওসি পতিতার সাথে!তাহলে খুন করেছে কে?সেই পতিতা? -না স্যার,আমি একজনকে কাল থানার দিকে আসতে দেখছিলাম।চেহারা দেখা যাচ্ছিল না তার। এক কনেস্টেবল বলে উঠল। আইজিপি রাগে এবার বলল, -তুমি কোথায় গিয়েছিলে বাবা? -স্যারের বিরিয়ানি আনতে! বাইরে থেকে এক পুলিশ অফিসার ঢুকল থানায়।স্যালুট দিয়ে বলল, -স্যার,আজ সকালে একই ভাবে আরেকটি খুন হয়েছে।জিম গার্মেন্টসের ম্যানেজার রফিক।তারও গলা কেটে কণ্ঠনালি বের করে ফেলা হয়েছে।বুক লম্বা ভাবে ছিড়ে ফেলা হয়েছে। আইজিপি অফিসার নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে বলল, -দুটো খুনের সাথে এক যোগসূত্র রয়েছে!লাশ পরিষ্কার করে দাফন দিয়ে দাও।অপমৃত্যু নামে ডায়রি করো। আইজিপি অফিসার থানা থেকে বের হয়ে আসলেন।সাংবাদিকরা দৌড়ে আসল, -স্যার,স্যার কিভাবে খুন হয়েছে? কে খুন করেছে? কারা এর সাথে জড়িত? কোন সিরিয়াল কিলার না রাজনীতিক শিকার? আইজিপি অফিসার গাড়িতে প্রবেশ করতে যেয়েও থেমে গেলেন, -জানতে চান কে খুন করেছে পুলিশ অফিসারকে? সাংবাদিক একজন বলল, -কে স্যার? -সুবোধ বালক!প্রতিশোধের নেশায় যে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে! যার নাম শুনলে আন্ডারগ্রাউন্ড,এমনকি পুলিশও ভয় পেয়ে যায়! সেই ছেলে! যে নিজেকে মহাপুরুষ ভাবে! সেই সিরিয়াল কিলার,অকৃ! ______________________________________________
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা।সূর্য অস্ত গিয়েছে কিছুক্ষণ।আকাশে কালো মেঘ।ঠান্ডা বাতাস বইছে।এ সময় অকৃর হাটতে ভালো লাগে।খুব ভালো।মেঘ জমায় রাস্তায় মানুষের চলাচলও কম।অকৃর হাটার আজ উদ্দেশ্য রয়েছে।সে হাটছে... আইজিপি পুলিশ অফিসারের বাড়ি।সাদা রঙের সুন্দর বাড়ি।বাইরে থেকে বুঝা যায় না কালো লোহার বিশাল গেটের জন্য।গেট বন্ধ।অকৃর কলিংবেল চাপল।আজকাল পথের গেটে কলিংবেল সচারচর দেখা যায়,দুষ্টু ছেলেরা দুষ্টুমি করে তাই।হয়তো এটা পুলিশের বাড়ি বলে রয়েছে। -কি চাই ছোকরা? অকৃ ভেবেছিল কোন পুলিশ অফিসার হয়তো খুলবে।তাড়িয়ে,বাড়িয়ে দিবে!তা না হয়ে এক বৃদ্ধলোক খোলল।গায়ে সিকিউরিটি পোশাক।কর্কশ গলায় বলছে আবার ছোকরা।অকৃ বলল, -স্যারের সাথে দেখা করতে চাই! -স্যার ব্যস্ত রয়েছে।দেখা করা যাবে না। অকৃ যা ভেবেছিল তাই "দেখা করা যাবে না" বাক্যটি শুনতে হবে।মিথ্যে বললে হয়তো ঢুকতে দিবে।তা বলা যাবে না,মার আদেশ! -চাচা স্যারকে বলুন,আপনার আর্টিকেল এসেছে। বৃদ্ধ একবার অকৃকে ভালোমতো দেখে ভিতরে চলে গেল।বৃদ্ধের মনে হয় সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার আছে।চোখ দিয়েই মানুষ পরীক্ষা করে নিতে পারে।বাড়ির দারোয়ান না হয়ে,গোয়েন্দা হলে ভালো নাম করতে পারতো। -স্যার বলেছেন,আর্টিকেল নিয়ে অফিসে দেখা করতে।এখন যান,উনি ব্যস্ত। না কাজ হলো না।আইজিপি স্যার বুঝতে পারেনি।অকৃ ভালো মতো ভেবে আবার বলল, -চাচা আরেক বার যেয়ে বলুন, স্যার আপনার সুবোধ বালক আর্টিকেল এসেছে।আমি যা বলেছি তাই বলবেন। বৃদ্ধ মনে হয় এবার রেগেই গেলেন। -বললাম না স্যার ব্যস্ত দেখা করতে পারবেন না!যাও.. -আপনি না বললে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। অকৃ কাদো কাদো ভাব নিয়ে বলল।হয়তো বৃদ্ধের মন গলেছে।বুড়া মানুষের মন বরফের মতো,একটুতেই গলে যায়। এবার ঢুকতে দিয়েছে।বিরাট বাড়ি।টাকা পয়সার কমতি নেই অফিসারের।তাই ঢাকা শহরে পরিবার নিয়েই বিশাল বাড়িতে থাকেন।গেস্ট আসলে ডাইনিং রুমে বসতে হয়,কিন্তু অকৃর জন্য লাইব্রেরিতে ডাক পড়েছে। আসলে বড়লোকরা অনেক কিছুই করেন।আজকাল ব্যক্তিগত লাইব্রেরি দেখা যায় না,তবুও তার বাড়িতে আছে।রুচিশীল ব্যক্তি বলা যেতে।বাড়িতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না,হয়তো বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। দোতলার সিড়ি দিয়ে উঠে ডান পাশেই লাইব্রেরি। রুহুল আমিন।আইজিপি অফিসার।বয়স চল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশ হবে।ভুড়ি নেই!উনি মনে হয় ঘুস খান না।পুলিশ যারা ঘুস খায়,তাদের একেকজনের বিশাল ভুড়ি।তাকে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন বলা যেতে পারে! একটি টেবিলে বসে আসেন।সামনে ল্যাপটপ আর একটি ফাইল।জরুরী কাজ।অকৃকে একবার দেখে বললেন, -বসো। অকৃ চুপচাপ বসে আছে।তিনি কাজে ব্যস্ত।কিভাবে কথা শুরু করবে ভাবছে অকৃ।পুলিশদের তাদের কাজে বাধা দিতে নেই,এতে গারদে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।চারপাশে কত রকমের বই,অকৃ বারবার সেগুলো তাকিয়ে দেখছে।অনুমতি ছাড়া সেগুলো ধরাও নিষেধ। -মামা চা! অকৃ দেখল সুন্দরী এক মেয়ে এক কাপ চা নিয়ে এসেছে।মেয়েটাকে আগে কোথাও দেখেছে সে।কোথায় যেন?হ্যা বাসে।সেদিন ভালোমতো দেখা হয়নি তাকে।আজ বেশ সুন্দরী লাগছে।আজ হালকা কাজল দিয়েছে।চুলগুলো একসাথে করে ডান দিক দিয়ে সামনে নিয়ে এসেছে।পরনে সাদা থ্রিপিস।যেন পুরো রুপকথার সিনড্রেলা।কেমন যেন ভালো লাগছে আজ মেয়েটাকে।মেয়েটা অকৃকে বলল, -আপনি? মামা উনি হলেন... রুহুল আমিন সাহেব মেয়েটাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, -আমি চিনি মা।তুমি যাও আরেকটা চা নিয়ে এসো।সাথে বিস্কুট।তোমার মামিকে বলো নাস্তা দিতে,মেহমান এসেছে। মেয়েটা চলে গেল।অকৃ এবার কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। -আমি কেন এসেছি আপনার জানতে ইচ্ছে করে না? -সবকিছু জানতে হয় না,কিছু জিনিস জেনে নিতে হয়।তাহলে মহাপুরুষ হওয়া যায়। -আপনি মহাপুরুষ হওয়ার চেষ্টা করছেন? -না।সেদিন তুমি মহাপুরুষের একটি গুন বলেছিলে,তাই সেটা মানছি।আর্টিকেলটা পড়েছিলে? -জি না। -পেপার বিক্রি করো,আর তুমি আর্টিকেল পড়নি? -নিজের স্টোরি পড়লে,মাঝে মাঝে মনে অহংকার সৃষ্টি হয়।তাহলে মহাপুরুষ হওয়া যায় না। -তুমি যে পেপার বিক্রি করো সেটা স্টোরিতে বলিনি।তা না হলে গোয়েন্দারা তোমাকে বের করে ফেলতো। -আমি স্বাভাবিক মানুষ হয়ে যেতে চাই!আর খুন করবো না! -তোমার প্রতিশোধ নেওয়া শেষ? তাহলে তো তোমাকে আবার কারাগারে বন্দি করতে হবে।চার বছর আগে তো বের করে দিয়েছিলাম।এবার.. মেয়েটা আবার একটি ট্রেতে করে নাস্তা নিয়ে এসেছে।রুহুল আমিন সাহেব বললেন, -মা কিছু বলবে? মেয়েটা মাথা নাড়ল। -তাহলে তুমি যাও।ওর সাথে কিছু কথা আছে। -বসুক না স্যার।আমার সম্পর্কে ও জানতে চায়।বসতে পারবে প্রশ্নহীন। -আচ্ছা বসুক।ও আমার ভাগ্নি নন্দিনী।চিনো তো ওকে। নন্দিনী বসল ওদের পাশে।অকৃ দেখছে,কি নিষ্পাপ চেহারা! -কি যেন বলছিলে অকৃ? -আমি আমার প্রতিশোধ শেষ করে ভালো হয়ে যেতে চাই। -আমি তো ভেবেছিলাম,তুমি অন্যান্য সিরিয়াল কিলারের মতো ৯৯টা খুন করে ১০০ নাম্বারে নিজেকে খুন করবে!৮২টি খুন করলে,আর তো বাকি নেই! -ভুল ১২৭টি খুন করেছি আমি।আর নয়.. -আমাকে কি করতে হবে? -আমি আমেরিকা যেতে চাই! -খুন করতে?আর তুমি যে কত বড় সিরিয়াল কিলার,তোমার তো টাকার অভাব থাকার কথা না! -টাকার জন্য আমি খুন করিনি,অন্যায় বিচার করার জন্য। -তোমাকে আমি আমেরিকায় পাঠাতে পারি! নন্দিনী আর চুপ থাকতে পারল না।প্রশ্ন করে বসল তার মামাকে, -মামা সে এত বড় খুনি,তুমি জানো।তবুও জেলে পাঠাচ্ছো না,তোমার সামনে বসে আছে।আবার খুন করতে সাহায্য করছো।সে কি তোমার দাবার গুটি,না তুমি তার দাবার গুটি? অকৃ এবং রুহুল আমিন সাহেব দুজন নন্দিনীর দিকে তাকাল। -মা,আমরা পুলিশ অফিসার।অনেক বড় বড় আসামি ধরে আনি।কিন্তু আনার পরে আর শান্তি নেই।মন্ত্রী মিনিস্টার ফোন দেয়।বলে,তার লোক।যদি বলি স্যার বে আইনি অস্ত্র পাওয়া গেছে।বলবে,ওগুলো সরকারি সম্পদ।সরকার অন্যায়ের পথে আছে।ফলে অনেক অপরাধীর বিচার হয় না।সে বিচার অকৃ করে দেয়। হ্যা, সে একদিক দিয়ে খারাপ কাজ করছে,মানুষ খুন করছে।কিন্তু সে মানুষ যে বড় অন্যায় করেছে।অকৃ একদিক দিয়ে সঠিক পথে আছে।তাই আমি ওকে সার্পোট দেই। নন্দিনী চুপ গেল।অকৃ বলল, -আমাকে আমেরিকা পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। -হুম তুমি আমেরিকা যেতে পারবে।কিন্তু খুন করে ফিরে আসতে পারবে না।পুলিশ তোমাকে ধরে ফেলবে।কারণ তোমাকে ধরার অনেক প্রমাণ তাদের কাছে আছে।শুধু তোমাকে পাচ্ছে না। -তাহলে? -অন্য পথ বের করো! -আরেকটি পথা আছে,আমাকে মেরে ফেলুন!সে আসবে! -তোমাকে মারবো?কি বলছো এসব? -হ্যা,আমার মৃত্যুর খবর তাকে বাংলাদেশে আনাবে।আর সে আসবে,তাকে বাংলাদেশে প্রয়োজন আছে। -কিভাবে? -একটি বিশ বছরের ছেলের লাশ আমি মর্গ থেকে চুরি করেছি।সেটাকে আমার বলে আপনি চালিয়ে দিবেন।ব্যস গল্প শেষ! -জিনিয়াস!ইনকাউন্টার করে দিয়েছি তাই? -হুম! -হবে।তবে এক শর্তে! -কি শর্ত? -আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হবে,যা আজো আমার অজানা।সেই চার বছর আগে দেখা হয়েছিল,আর কবে যে দেখা পাবো জানি না!আজই উত্তর দিতে হবে। -বলুন.. -আমার প্রথম প্রশ্ন,সেদিন নন্দিনীকে সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে।তোমাকে দেখা গেল না কেন? -সেখানে যে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে আমি জানি না।তাই বলতে পারছি না কেন আমাকে দেখা যায় নি!কিভাবে ছিল সেই ক্যামেরা! -হুম,তারপর আমি ছোটবেলা থেকে অনেক সিরিয়াল কিলার দেখেছি,তারা বাচতে পারেনি।কিন্তু তুমি এতগুলো খুন করে কিভাবে বেচে আছো? -সিরিয়াল কিলার দুই ধরনের।এক,একদল মদ খেয়ে খুন করে।দুই,দ্বিতীয় দিল মানসিক রোগে আক্রান্ত।তাই তারা খুন করে প্রমাণ রেখে আসে।আমি খুন করেছি ঠান্ডা মাথায়,শান্ত ধীরভাবে।খুন করতে গিয়েছি,সে বুঝতে পারেনি।খুন করার আগে কথা বললে ঝামেলা।হাতাহাতি হয়,তাই চুপচাপ খুন করে তারপর কথা বলি।যতটুকু সম্ভব প্রমাণ রাখিনি।তাই বেচে গেছি। -তুমি মাথা ঠান্ডা রেখেছো কিভাবে?খুন একটি ড্যাঞ্জারাস জিনিস! -আমি খুনকে হোমওয়ার্ক হিসেবে নিয়েছি।বৃহস্পতিবার ছাত্ররা যখন হোমওয়ার্ক করে মাথা ঠান্ডা রেখে করে,কারণ হাতে শুক্রবার রয়েছে। -খুব ইন্টারেস্টিং!এখন বলো পুলিশ ও আন্ডারগ্রাউন্ড কিলাররা তোমাকে ভয় পায় কেন?আমার কাছে অল্প রিপোর্ট আছে,তবুও তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই! -মিরপুর থানার ওসি,খুব খারাপ লোক।ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েটাকে চড় দিল।আমি খবর পেয়ে উড়ো চিঠি দিলাম,মাফ চেয়ে নিতে।কথা মানেনি।তাই তার হাতটা পুড়িয়ে দিতে চাই।কেরোসিনটা তার মুখেও পড়ে,ফলে মুখটা পুড়ে যায়।সেখান থেকে পালাতে পারিনি,পুলিশ সেই এলাকা ঘিরে ফেলে।আমি দুদিন একবাড়ির টাংকিতে লুকিয়ে ছিলাম।ফলে রটে যায় আমি ভয়ানক! -তারপর? -সেই পুলিশ অফিসার আর এক মেয়ের বাড়ি ভাঙ্গচুর করা বখাটেরা।পুলিশ মামলা নিল না।বললাম,পুলিশ এক্সিডেন্ট করবে।তাই চাকা একটা খুলে দিয়েছিলাম।সেই দূর্ঘটনায় সে যে পঙ্গু হবে জানা ছিল না।বখাটেদের রাতে অন্ধকারে এলোপাথাড়ি মারি।ওরা ড্রিঙ্কস করেছিল,তাই সে বার বেচে যাই। -আর আন্ডারগ্রাউন্ড? -বাংলাবাজার যাচ্ছিলাম বই কেনার জন্য,হেটে।ন্যাশনাল হাসপাতালের কাছে এসে শুনি পুরান ঢাকার টাক্কু তারেক কাজের বুয়াকে রেপ করেছে।কাজের মহিলা গরিব বলে বিচার পায় নি।আমি সেদিন আর ফিরিনি।খোজ করি টাক্কু তারেকের।পেয়েও যাই।তার বাড়িতে যেয়ে মেরে ফেলি,আমার স্টাইলে।নোট দিয়ে আসি,"মার বয়সীকে কিভাবে?ডন হয়ে গেছ?" পুলিশ বলে দেয়,খুন আমি করেছি।ছোটখাটো একটু নাম হয় আমার। তারপর,এক পরিচিত ভাই আমাকে খবর দেয়।গোপীবাগের ব্ল্যাক সাদ্দামের ছেলে এক মেয়েকে রেপ করে,তারপর মেয়েটাকে সাদ্দাম মেরে ফেলে।সেখানে সাদ্দাম ও তার ছেলেসহ মোট ১২ জনকে খুন করি।একটি গুলি লাগে আমার হাতে।লোক এসে পড়ে তখন,বেচে যাই। -সেখান থেকেও বেচে গেলে?কিভাবে? -সাদ্দামের স্ত্রী,খুব ভালো মহিলা।মহিলাকে সাদ্দাম অনেক অত্যাচার করতো,তার কাজে বাধা দিতো বলে।আমাকে তাদের লোক বলে সেখান থেকে বাচিয়ে দেয়। তারপর পুরো ঢাকার ডন লাল ভাই আমার খোজ করে,আমাকে মেরে ফেলার জন্য।এ খবরটা ব্ল্যাক সাদ্দামের স্ত্রী আমাকে দেয়।দেখা করি লাল ভায়ের সাথে,খুব সাহস হয়ে গিয়েছিল মনে।থ্রেট দিয়ে আসি।মুখ ঢাকা ছিল বলে,আমাকে আর ধরতে পারেনি।এখনও সে আমাকে খোজছে,মেরে ফেলার জন্য। -হুম,খুব পাওয়ারফুল হয়ে গেছ।একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন।শোনেছি,তুমি বিড়বিড় করে কার সাথে যেন কথা বলো।কে সে? -আমার চিন্তা আমার সাথে কথা বলে। -তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?মাথায় তোমার সমস্যা হয়েছে,নিউরোলজি ডাক্তার দেখাও। -না,আমার প্রতিশোধ নেওয়ায় সে সাহায্য করে। -আচ্ছা বাদ দাও।তোমার কোন আত্মীয় নেই? -আছে,চিনবে না আমাকে এখন। -এখন বলো,নিপা কে ছিল? -পথে পরিচয়,পথের বোন।ভালো মেয়ে। -হুম ভালো ছেলে পাঠিয়েছি।খুব টাকাওয়ালা ছেলে।বেচারা কষ্টে ছিল,প্রথম স্ত্রী বিয়ের কয়েকদিন পর মারা যায়।এখন ওরা ভালোই আছে।তোমার লোক,তাই মাঝে মাঝে খোঁজ খবর নেই। -ধন্যবাদ। -শেষ প্রশ্ন,তোমার মতো অকৃ হতে হলে কি করতে হবে? -প্রবল ইচ্ছে শক্তি।ইচ্ছে কারণে মানুষ আজ মঙ্গল গ্রহে যেতে পারছে,সেভাবেই ইচ্ছের কারণে সব হয়।একজন অকৃ হতে হলে ইচ্ছে শক্তি লাগবে আর ভয়কে জয় করতে হবে। -মহাপুরুষ সম্পর্কে তুমি কি বলবে? -আপনার যে ছেলেটা আসছে,সে মহাপুরুষ হবে। রুহুল আমিন সাহেব এবার খুব অবাক হয়ে গেলেন।নন্দিনী যেন আকাশ থেকে পড়ল।আমিন সাহেব বললেন, -আমার স্ত্রী গর্ভবতী, তুমি জানলে কিভাবে?তোমার সাথে দেখা হয়েছে।দেখা হলেও তো বলতে পারতে না।সে যে গর্ভবতী,শুধু আমি আর সে জানি।আর কেউ নয়।কারণ মাত্র দুই মাস চলে।আর ছেলে হবে সেটা কে বলল? -আমার চিন্তা,আমার অনুমান।বিশ্বাস হলে মিলিয়ে নিয়েন। -বিশ্বাস করতে হচ্ছে তোমার অনুমান ঠিক। আমিন সাহেব অকৃকে রাতের খাবার না খেয়ে যেতে দিলেন না।আমিন সাহেবের স্ত্রী ভালো মহিলা।অকৃকে ছেলের মতো আদর করে খাওয়ালেন।নন্দিনী আর অকৃর মাঝে এক দূর্বলতা কাজ করছে,হয়তো ভালো লাগা!অকৃ আমিন সাহেবের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার সময়,নন্দিনী বলল, -অকৃ,তোমার ভালো নাম নেই? -আছে।অকৃ সৃষ্টি হয়েছে আকিব থেকে।আর বাবা,মা ডাকতো কাউসার বলে! -আমাদের আবার কবে দেখা হবে? -যেদিন এই ধরা ফুলের সাজে সাজবে! অকৃর মৃত্যু হয়েছে।ছড়িয়ে পড়ল এই খবর দেশের আনাচে কানাচে।দেশে যেন শোক শুরু হয়ে গেছে।পত্রিকায় বিভিন্ন ভাবে খবর প্রকাশ করছে।পুলিশ থেকে বলা হয়েছে,"অকৃকে এনকাউন্টার করে,পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।যাতে তার দেহ নিয়ে কোন ঝামেলা না হয়!" কলেজ,ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা শোক র্যালি করছে।অকৃ তাদের আইডল হয়ে গিয়েছিল।শোক মেতে উঠেছে দেশ।সন্ধ্যার অন্ধকারে মোমবাতি র্যালি করছে ছেলেমেয়েরা।কবি কবিতা,লেখক লিখছে গল্প। এর মাঝে অকৃ হেটে যাচ্ছে,খালি পথের মাঝে।হাহাকার যেন করছে এই শহর।কোথাও শোক র্যালি,কোথাও শূন্যতা!পুরো শহর যেন কাদছে!অকৃ হাটছে ফুটপাত ধরে,অকৃ দাঁড়িয়ে পড়ল। -চাচা,কি করছেন? -অকৃকে নিয়ে লিখছি। -অকৃ আপনার কি এমন করেছে? -সে আমার মেয়ের ইজ্জত বাচিয়েছে,বাজান! লোকটার সেই দেয়ালের লেখাটা পড়ে,অকৃ হেটে চলে গেল দূর থেকে দূরে,বহুদূরে!আধারে মিশে গেল সে!অকৃ আর অকৃ নেই!মহাপুরুষ! আজ নিলয়ের বোনের বিয়ে হয়েছে।একমাত্র বোন নুপুর।খুব ভালো জায়গায় বিয়ে হয়েছে।বাড়িটা এখন শূন্য।মেহমানরা সবাই চলে গেছে।বাড়ির মহিলা ভিতরে বসে গল্প করছে,তাদের হাসির আওয়াজ বাইরে আসছে।সিগারেট ধরালো সে।ধোয়া মিশে যাচ্ছে আঁধারে।গ্রামের পরিবেশ খুব অন্ধকার।নিলয় তাকিয়ে আছে সেই ধোয়ার দিকে।যেখানে আঁধারের সাথে,তা মিশে গেছে।নিলয় তাকিয়ে আছে সেদিকে।সেই আঁধার থেকে যেন কে বেরিয়ে আসল।মহাপুরুষ! -নিলয়! -কে তুমি? -আমাকে চিনতে পারছো না?আমি কামিনী! -কামিনী?সে তো মেয়ে,কিন্তু তুমি ছেলে। -হ্যা,আমি ছেলে।আমি কামিনী,কামিনীর ভাই। -কাউসার? -হ্যা,মনে পড়ে সেই সন্ধ্যেবেলার কথা।আমার বোনকে তুই... -তুমি মারা যাও নি? -মারা গিয়েছি।কিন্তু তোকে ছাড়া আমি শান্তিতে কিভাবে থাকি।তোকে নিতে এসেছি! -আমাকে নিতে? -হ্যা।এতদিন তো আমেরিকায় ছিলি।পাই নি তোকে।প্রতিশোধের নেশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। -প্রতিশোধ!কিসের প্রতিশোধ? -আমার বোনের প্রতিশোধ! শাহানারা বেগম বাড়ির পিছনে কিসের যেন আওয়াজ পেলেন।বিয়ের রঙিন বাতি জ্বলছে।তিনি বাড়ির পিছনে গেলেন।স্পষ্ট দেখতে পেলেন তার ছেলেকে।গলা কাটা অবস্থায় পড়ে আছে।একটি চিৎকার দিলেন,তারপর পাশে লেখাটা দেখে নিজেকে সামলে নিলেন।লোকজন জমা হয়ে গেছে।সবাই হতভম্ব।যা ভেবেছিল,তা হবে না ভেবেছিল।আজ তাই হয়েছে। নিলয় নিথর দেহ নিয়ে পড়ে আছে।অকৃ ছুরি দিয়ে তার গলা কেটে ফেলেছে,কণ্ঠনালি বের হয়ে ফোসফাস আওয়াজ হচ্ছে।তারপর বুকে,পেটে ছুরি ঢুকিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।বুকটা ফেড়ে হৃদপিন্ড বের করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে,তা এখনও জ্বলছে! তার রক্তে মাটির উপর খোদাই করে লেখা,"প্রতিশোধ!" অকৃ হাটছে।আজ হাটতে তার খুব ভালো লাগছে।খুব আনন্দ তার।প্রতিশোধ শেষ হয়েছে।সে এক নতুন মানুষ।আজ থেকে পৃথিবী তাকে নতুন ভাবে চিনবে।সে কোন সিরিয়াল কিলার নয়,সে এক মানব।অতি সাধারণ মানব।আবার মহাপুরুষ!এই সন্ধ্যায়,ল্যামপোস্টের আলোয় সেই লোকটার লেখা মনে পড়ছে অকৃর... "দেখ তাকিয়ে পথ শিশুদের মাঝে, নয়তো দেখ রাস্তায় বখাটেদের ভীড়ে! স্কুল,কলেজের ছেলেদের সাদা ইউনিফর্মে, দেখ অকৃ হাসছে,নিষ্পাপ শিশুর মনে! অকৃ মারা যায়নি! কথা বিশ্বাস হয়নি? অকৃ বেচে আছে সকল অস্তিত্বে, সকল অন্যায়,পাপ ধ্বংস করছে। সকল ধর্ষককে করছে খুন, অকৃ করে না কোন ভুল! শোনে রাখো, অকৃ হারায় নি! সবে শুরু হয়েছে ইতিহাস, অল্পে করবে না শেষ গল্প!" সমাপ্ত....
Tags:horror,story,ভুতের গল্প,ভুতপ্রেত,গল্প,ভূত,ভয়ংকর,ভূতের গল্প,পেতনি,গাছের ভূত,সিরিয়াল কিলার, অক দা সিরিয়াল কিলার,রেডিও,রেডিও ফুরতি,radio foorti,bhootfm,radiofoortibhootfm,bootfm story,Radio foorti,dangerous story,রাতের গল্প,rj rasel,rasel bootfm,rj rasel bhoot fm,rj rasel story,bhootfm story mp3 download,story mp3,রাসেল,অারজে রাসেল,ভূত এফএম,মারডার,kill,হত্যা,রহস্য,ভুত,জ্বিন,
-আমি কি বলবো?
-বাধা দে যা..
-আমার দ্বারা সম্ভব না।তাতে আমার ক্ষতি হতে পারে।কেন পায়ে পাড়া দিয়ে সমস্যা নিজ কাধে নিয়ে আসবো?
-যা না!কিছু কর,মেয়েটার বুকের কাপড় ছিড়ে ফেলছে ওরা। -নয়জন লোকের সাথে আমি কি করবো?আমি তো মার খাবো ফ্রি!
-লোকগুলো মেয়েটার সামনে আপত্তিকর অবস্থা করে ফেলছে।নয়জন পুরুষ আর একজন কিশোরী।এরচেয়ে মেয়েটার মৃত্যুই শ্রেয়।
-মরে যাক,মরলেই শান্তি পাবে!
-তবুও তোর তো একটা দ্বায়িত্ব রয়েছে?
-দ্বায়িত্ব! কিসের দ্বায়িত্ব?এই দ্বায়িত্ব কোথায় গেছিল সেদিন।দুজন লোক আমার বোনকে ধর্ষন করছে,আর পুরো দুনিয়া হা করে দেখেছে।কেউ তো সেদিন কিছু বলেনি।বাবা গেল মামলা করতে,পুলিশ মামলা নিল না!বোন আমার লজ্জায় গলায় ফাসি দিলো।পুলিশ তখন আসছে ময়না তদন্ত করতে!হায় রে!বাবা বোনের শোকে আর সম্মানের কারণে সেও বোনের পথ ধরল।মাও চলে গেল তাদের সাথে।
এলাকার সেই লুইচ্চা নেতারা আমাকে বলে,"খোকা তুমি এত বড় বাড়ি দিয়া কি করবা?"
৫০০টাকা ধরাইয়া দিয়া বাড়ি থেকে আমাকে বের করে দিল!কি দুনিয়া!সেদিন কোন কারো দ্বায়িত্ব ছিল না!
-তুই মেয়েটা কে বাঁচা।তোর মার দোহাই লাগে..
"ব্রেকিং নিউজ,গতকাল মিরপুরে এক বাসে নয়জনের উলঙ্গ লাশ পাওয়া গেছে।কে বা কারা খুন করেছে,জানা যায় নি।তথ্যসুত্র বলছে,লোকগুলো ঐ বাস পরিবহনের কর্মচারী। আর তাদেরকে একটি ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়।পুলিশ এই নিয়ে তদন্ত করছে।বাকি খবর জানতে আমাদের পাশেই থাকুন।"
টিভিটা বন্ধ করে দিল নন্দিনী।তিক্ত লাগছে তার কাছে এই দুনিয়া।
ঠকঠক করে কড়া নাড়লো দরজায় কেউ।নন্দিনী উঠে যেয়ে দরজা খুলল,
-কি চাই?
-আমরা মিরপুর থানা থেকে এসেছি।আমি ওসি...
-তা দেখতেই পাচ্ছি!কি করতে হবে আমাকে?
পুলিশের সাথে এভাবে কথা বলা,অবাক হচ্ছে সিনিয়র ওসি শহিদ উদ্দিন।নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
-গতকাল রাতে বাসে খুনের ঘটনা নিশ্চয়ই জানেন আপনি?কেননা আপনার একমাত্র ছবি সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে?
-হুম,এই যে নেন প্রুফ।গতকাল তারা আমাকে ধর্ষন করতে চেয়েছিল,তাই তারা খুন হয়েছে।
-খুন কি আপনি করেছেন?
-আমাকে দেখে কি মনে হয়?
-তাহলে কে খুন করেছিল?আর কি হয়েছিল সেই রাতে? - শুনুন তাহলে,"ফ্রেন্ডের বাসা থেকে প্যাক্টিকেল শেষ করতে রাত এগারটা বেজে যায়।রাস্তাঘাট ফাকা হয়ে গেছে।কোন বাস নেই।অবশেষে একটি বাস পাওয়া যায়।উঠে পড়ি তাতে।বাসে যারা মারা গেছে তারা এবং আরো একজন ছিল।আমি বরাবরের মতো সামনে মহিলা সিটে বসি।কিছুক্ষণ যাওয়ার পর এক লোক আমাকে বলে,খুকি কোথায় যাচ্ছ?তোমার ওড়না তো অনেক সুন্দর! এই বলে আমার ওড়না টান দেয়।শুরু হয় ধস্তাধস্তি,বাকি লোকগুলো উঠে আসে। আমার জামা ছিড়ে ফেলে, তারাও আপত্তিকর অবস্থায় চলে আসে।আমার মুখ বেধে রেখেছিল,তাই চিৎকার করতে পারছিলাম না।
কিন্তু সে হঠাৎ উঠে আসে।আমি মনে করেছিলাম, সেও তাদের দলে।না,সে তার পকেট থেকে ছুরি বার করে।প্রথমে একজনের গলায়,অপরজনের পেটে,তারপর বুকে।এভাবেই ধর্ষনকারীরা কিছু বুঝে উঠার আগে সে শান্ত ভাবেই তাদের খুন করে,আর কি যেন বিড়বিড় করে বলছিল। ছুরিটা ফেলে দেয়।
তার পরনের শার্ট খুলে আমাকে দেয় এবং বলে,
-বাসায় চলে যাও।আর কেউ কিছু করবে না।বাসায় যেয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে আধ ঘন্টা সময় নিয়ে গোসল করবে।আর তোমার জামাকাপড় খুলে একটি পলিথিনে রাখবে,কাল পুলিশকে দিবে।সুইসাইড করার কথা ভাববে না।যাও.."
আমি চলে আসি বাসায়।
স্টোরি শুনে অবাক হয়ে যায় ওসি শহিদ উদ্দিন। বলে, -নাম কি ছেলেটার?জানো কিছু?
নন্দিনী শান্ত ভাবেই বলে,
-হুম জিজ্ঞাসা করেছিলাম বলেছে অকৃ।
-অকৃ!ভেরি ইন্টারেস্টিং ন্যাম।বয়স কি রকম হবে?
-আঠার থেকে কুড়ি।
-হুম গুড।
-আপনার নাম কি?আপনাকেও থানায় যেতে হবে।এই খুনের সাথে আপনিও জড়িত আছেন।
-তা জানি।নাম আমার জেনে যান।নন্দিনী।ছেলেটা আমাকে আরো কিছু বলে গেছে আপনাদের বলতে।
-কি বলেছে?
-বলেছে,"পুলিশকে বলবেন আপনার নাম মিডিয়ায় এবং আপনাকে এই মামলা যুক্ত না করে।শুধু আমার নাম বলবেন!" -আচ্ছা আসি আজ।
ওসি শহিদ উদ্দিন আর তার সহকারী বের হয়ে আসে নন্দিনীর বাসা থেকে।সহকারী শামসুল বলে,
-স্যার অকৃর কথায় কি মেয়েটাকে ছেড়ে দিবেন?
-তুমি কি চাও পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে থাকতে বা এই সুন্দর চেহারা পুড়ে দিতে?
-নো স্যার।তাহলে ওই মেয়ের নাম মুখে নিবে না।অকৃ ইজ ড্যাঞ্জারাস ম্যান। -তাই বলে কি তাকে ধরা হবে না? -তাকে কেউ দেখেনি।কে সে কেউ জানে না।তবে অকৃ খুন করেছে সবাই জানে।এই নিয়ে তার হলো ৫৭তম খুন।এটা পুলিশের হিসাব।বাকিটা ওপরওয়ালায় জানে। -এরকম খুনিকে তো আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। -নতুন এসেছ চেপে যাও।বহুত রঙ আছে তাতে।শুনেছি আমাদের এক সিনিয়র তাকে নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখছেন।তিনি অকৃকে দেখেছেন,তাকে ধরে রাখতে পারেন নি।কোন প্রমাণ ছিল না তার হাতে।তাহলে তো আমরা রাস্তার বিড়াল.. -কে এই অকৃ? কি তার পরিচয়? -অকৃ! হি ইজ আ সিরিয়াল কিলার! ______________________________________________
-তের বছর মেয়ের পেটে তিন মাসের বাচ্চা!মা আর মেয়েটা আজ মারা যাইবো। -কই আছে ওরা? -স্টেশনে।ট্রেনের নিচে পড়ে দুনিয়াকে ছেড়ে যাবে! -হু! -কি ভাবছিস? -ভাবছি খুন করা ছেড়ে দিবো!আর কত? -তোর বোনের ইচ্ছা... -হুম সেই প্রতিশোধটা নিয়ে নিলে হয়তো এত খুন করতে হতো না!আচ্ছা বলতো,আজ আকাশে তারা আছে,চাঁদ নেই কেন? - চাঁদ আছে,হয়তো তুই দেখছিস না বা মেঘের আড়ালে আছে। -জানিস মা বলত,"বাবা তুমি একদিন বড় হয়ে ঐ যে পশ্চিম আকাশে বড় তারাটা দেখছো,সেই রকম হবে।" আমি বলেছিলাম,"আর ছোট তারাগুলো মা,ঐ চাঁদ?"মা বলল,"সেগুলো মানুষ আর চাঁদটা হলাম আমি!তোমাকে আলো দিবো,তুমি বেচে থাকবে।" বাবা সেদিন বলেছিল,"আমার ছেলে মহাপুরুষ হবে এবং মেয়ে হবে জগত সেরা ডাক্তার!" বোনটা তো চলে গেল।বাবা,মার ইচ্ছা কি পূরণ করতে পারবো? -অকৃ,তুমি পারবে।তোমার বাবা,মা আমায় তাই বলেছে। -শোন,তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে কবে? -যখন প্রতিশোধ শেষ হবে! তেজগাও রেলস্টেশন।ছোট্ট একটি স্টেশন।লাল বাতিগুলো মিটমিট করে জ্বলছে।ফাকা স্টেশন।তবুও কিছু লোক হাটা চলা করছে।লাল আলো আর আঁধারের খেলার মাঝে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে গোপনে। -খালা,মরে গেলেই কি প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে? শাহানারা বেগম হকচকিয়ে গেল।ভেজা চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখে বিশ বয়সের এক যুবক।সে কি বলবে খুজে পাচ্ছে না।স্টেশনের এক কোণে বসে ছিল সে মেয়েকে নিয়ে,সময় আর সুযোগের অপেক্ষায়।কেউ তো তাকে দেখার কথা নয়।তাহলে কিভাবে... -খালা,মেয়েটার নাম কি? -তুলি। -পুলিশের কাছে গেছিলেন? -না বাবা।কে তুমি? -আমি হয়তো আপনার ছেলে। -আমার ছেলে? -অসহায় মায়েদের ছেলে আমি আর বোনদের ভাই।তাদের সাহায্য করাই আমার কর্ম।এই দুনিয়ায় যার বিচার নেই, তার বিচার উপরওয়ালায় করে। -তা বাবা জানি।কিন্তু এই কলঙ্ক নিয়ে বেচে থেকে লাভ কি বলো? -লাভ,লোকসান বুঝি না।তবে মৃত্যু এর বিচার করে না।তা বলেন দেখি কিভাবে হলো এই সব! -তুমি শুনে কি করবা?আমার মেয়ের ইজ্জত ফিরাইয়া দিতে পারবে?না তার বিচার করতে পারবে? -ইজ্জত দিতে পারবো না।তবে বিচার করে দিতে পারবো,শেষ বিচার! -কে তুমি বাবা? -আপনার ছেলে! দুই হাত দিয়ে চোখে মুছে ফেলল শাহানারা বেগম।বলতে লাগল তার কষ্টের কথা, "আমি কাজ করতাম মোহসিন মিয়ার বাড়ি।কাজের বুয়া আমি।স্বামী মারা গেছে অনেক আগে।তাই মেয়েটারে আমার সাথে নিয়ে যেতাম।প্রতিদিনের মতো সেদিনও নিয়ে যাই।মোহসিন মিয়া মেয়েটারে ডাক দেয়।তুলি যায়।আমি রান্না করতে ছিলাম আপার সাথে।মানে মোহসিন মিয়ার বউ। তুলি অনেকক্ষণ হলো আসে না।ভাবলাম খেলতাছে বা টিভি দেখতাছে।হঠাৎ মেয়েটার চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পাই।আমি আর আপা দৌড়ে যাই।দেখি আমার মেয়ের সাথে মোহসিন মিয়া....." নিজের কলঙ্ক বলতে যেয়ে কেদে ফেলে শাহানারা বেগম।অকৃ স্বান্তনা দিয়ে বলে, -মা,পুরোটা শুনতে চাই।বিচার কিন্তু হয়ে যাবে। -তুমি আমারে মা বলছো?শোনো, "আমি আর আপা বাধা দিতে যাই।আমাদের পিস্তল দিয়ে ভয় দেখায় মোহসিন মিয়া।বলে আমাদের মেরে ফেলবে।এরপর প্রতিদিন করতো মেয়ের উপর নির্যাতন।যেদিন তুলিকে নিয়ে না যেতাম আমারে মারতো,আর খারাপ ভাষায় গালাগালি করতো!পিস্তলের ভয় দেখাইতো।তার ভাতিজায় আবার নেতা,তাই কারো কিছু বলতে পারতাম না।তাদের নামে খুনের মামলা আছে শুনছি,তাই খুব ভয় পেতাম। কিন্তু সেদিন শুনতে পেলাম মেয়েটার পেটে বাচ্চা।তাই আমারে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিল।বলল,কাউকে বললে মেরে ফেলবে আর ওই বাড়িতে যেতে না।আপায় কাদতে কাদতে কিছু টাকা দিয়ে বলল,বোন তুই যা গা।মেয়েটার চিকিৎসা করা।আর আসিস না। আমারে বস্তির থেকেও বের করে দিল।অপমান করে।লোক জানাজানি হলো,আমি আর মেয়েটা নাকি খারাপ কাজ করি।তাই বেচে থেকে লাভ কি?মরতে আসছি,কলঙ্ক থেকে মুক্তির জন্য !" -মা,মেয়েটার চিকিৎসা করাইছো? -না বাবা। -মা আমি যা বলি,তা মানবা?তোমার বিচার কিন্তু কবুল হইছে উপরওয়ালার দরবারে! -কি করতে হইবো? -এখন বস্তিতে ফিরে যাও।কাল মেয়েটার চিকিৎসা করাবে আর পুলিশ এসে কিছু টাকা দিবো।সেটা নিয়ে গ্রামে বাড়ি চলে যেয়ে মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করে দিবা,পারবা না মা? -হ্যা, বাবা পারবো!কিন্তু তোমার পরিচয় দিলে না? -আমি তোমার ছেলে হই মা!এখন আসো চা দিয়ে রুটি খাই।আমার কাছে কিছু টাকা আছে,তিনজনের হয়ে যাবে। সূর্যের আলো বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে মানুষের ভীড়।সবার ইচ্ছে,মোহসিন মিয়ার শেষ পরিণাম এক পলক দেখা।কি হয়েছে তার!কেউ তার গলায় ছুরি দিয়ে কণ্ঠনালি বের করে ফেলেছে এবং তার বুকে লম্বা ভাবে কেটে ফেলেছে। তার লাশের পাশের দেয়ালে তার রক্ত দিয়ে লেখা,"তুলির জন্য দশ লক্ষ টাকা চাই!" -কি ডিটেকটিভ আকাশ,কিছু পেলেন? -না,কোন সূত্রই নেই। -আগেই বলেছিলাম,এটার কার কাজ! -তবুও দেয়ালের এই লেখার ফিঙ্গার প্রিন্ট,তাতে কিছু পাওয়া যাবে। -আশা ছেড়ে দেন।পাওয়া যাবে না। -ওসি সাব,আপনি কি এই খুনের সাথে জড়িত?আপনার কথায় রহস্য আছে মনে হচ্ছে। -নতুন আসছেন এই এলাকায়, তাই বলছেন।দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করি,কিভাবে কি হলো! তেজগাও থানার ওসি শাহিন।বেশ নাম,ডাক থাকলেও কিছু আসামি তিনি ধরতে পারেন নি।তার মাঝে এই খুনি হলো অন্যতম।দারোয়ানের বয়স বেশি না,যুবক মানুষ।ঠোঁটে পানের দাগ এখনও লেগে আছে।যেন বড় ধরনের এক পানখোর। -কাল রাতে কি হয়েছিল?তুমি কিছু দেখছ? -স্যার আমি কিছুই দেখিনি।শুধু শেষ রাতে স্যার এসে বলে,গেট খোল জসিম নতুন মাল আসছে!আমি গেট খুলে দেই,কিন্তু স্যার ফিরেন নাই।ফজরের পর বের হয়ে দেখি স্যারের এই অবস্থা! দারোয়ান জসিম নিজের মালিকের এই অবস্থা দেখে কাদতে লাগল। -বুঝলেন ডিটেকটিভ আকাশ,কোন সাক্ষী নেই।তবে একজন সাক্ষী আছে,কিন্তু তার সাক্ষী গ্রহণযোগ্য নয়। -কে সে স্যার? -তুলির মতো তাকেও ধর্ষন করেছিল মোহসিন মিয়া।অপবাদ দিয়ে বের করে দেয়।ফলে পাগল হয়ে গেছে।ঐ দেখেন রাস্তার ওপাশে। রাস্তার ওপাশে জীর্ণ শীর্ণ পোশাকে এক মহিলা বসে আছে।মহিলা নয়,জবা পাগলি।ওসি শাহিন বলতে লাগল, -আগে কয়েকবার এখানে এসেছিলাম।দেখি পাগলিটা এখানেই বসে থাকে।চলেন যাই।শুনে আসি কি হয়েছিল? ওসি শাহিন এবং ডিটেকটিভ আকাশ জবা পাগলির কাছে গেল।শাহিন বলল, -জবা আপা,কাল রাতে এখানে কি হয়েছিল?কে মেরেছে মোহসিন মিয়াকে? জবা পাগলি চুপচাপ বসেছিল।প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ ওসি সাহেবের এক পলক তাকিয়ে থাকল।তারপর একটা হাসি দিয়ে, -প্রতিশোধ সাব,প্রতিশোধ!ওরে কাল রাতে আজরাইল মাইরা লাইসে।প্রতিশোধ নিছে। -ছেলেটাকে দেখছ তুমি? জবা আবার হাসি দিয়ে বলে, -ওকে দেখতে হয় না সাব।ওর ছায়া বলে দেয় ও কে!আগুন,ও আগুন! -বুঝলেন আকাশ,ওকে আমাদের চিনতে হয় না!ওর পরিচয় ও নিজেই দেয়।খুনের স্টাইল বলে দেয় কে মেরেছে! -নাম কি স্যার ওর? আর তুলিকে কি টাকা দেওয়া হবে? -আপনি কি আরো একটা খুন দেখতে চান? -কেন? -তাহলে টাকা তো দিতে হবে। -বুঝলাম,কিন্তু কে এই সিরিয়াল কিলার? -সকল ধর্ষিতা নারীদের ছেলে অথবা ভাই! -নাম কি ওর? -অকৃ দ্য সিরিয়াল কিলার! ______________________________________________
- আসামির নাম কি? -অকৃ! ওসির হাত কেপে কলম পড়ে গেল।গলা শুকিয়ে আসছে,তবুও ঢোক গিলে বলল, -আপনি কি সত্যিই অকৃর নামে মামলা করতে এসেছেন? -হ্যা,সত্যি।সেই সিরিয়াল কিলারের নামে! ওসি এবার ভয় পেয়ে গেলে।পাশে রাখা পানির বোতল থেকে পানি খেয়ে নিলেন।কপালে ঘাম জমছে,তা রুমাল দিয়ে মুছে নিলেন।ভালো মতো দেখলেন মেয়েটাকে! -নাম কি আপনার? -মিতু।আপনি সম্ভবত ভয় পাচ্ছেন।অকৃ কোন গ্যাংস্টার না!ওর কোন টিম নেই।আপনি মামলা না নিলে আমি আসি,আদালতে মামলা করবো। -না না না,বসুন।তার অপরাধ কি? -আমাকে ধর্ষন করেছে। -কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে? -হ্যা,সকল পরীক্ষা আমি দিয়ে এসেছি।রেজাল্ট দ্রুত আসবে আর এই যে ধর্ষন অবস্থায় আমার পোষাক!আর কিছু? ওসি সাহেবের বুকের হার্টবিট বেড়ে গেছে।ধর্ষকের মৃত্যুর নায়ক আজ ধর্ষক।বিশ্বাস করতে পারছেন না।তবুও মামলা নিতে হবে।না হলে আইন বিলে কিছু থাকবে না। -আপনি তো পুরো প্রস্তুতি নিয়েই আসামিকে আটকাচ্ছেন।কিসে পড়েন? -অনার্স ফার্স্ট ইয়ার! -এডুকেটেড!দারুণ!আপনার সাথে তার সম্পর্ক কি?আর কি কি হয়েছিল,জবানবন্দি দেন! -"অকৃর আমার ক্লাসমেট।ও আমার খুব ভালো বন্ধুও ছিল।অকৃ ওর সবকিছুই আমার সাথে শেয়ার করতো।ওর চিলেকোঠায় রোজ আমরা আড্ডা দিতাম।ভালোই চলছিল আমাদের বন্ধুত্ব,কিন্তু ও আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়! কিন্তু অকৃ ছোট পরিবারের ছেলে।নেই ওর কোন আত্মীয় বা পরিচয়।আবার অকৃ সিরিয়াল কিলার নামে খ্যাত।আমি একটি বিত্তবানের মেয়ে।বাবার অনেক সম্মান কিভাবে ওর সাথে আমার মিলে? না,করে দেই অকৃকে।ও কান্নাকাটি করে।পরে আবার ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু গতকাল আমাকে ওর চিলেকোঠায় ডাকে, আমি যাই।অতঃপর জোরপূর্বক ভাবে আমার সাথে..." মিতু থেমে যায়।মেয়েটার চোখে পানি।চোখের কাজল, পানির সাথে মিশে গড়িয়ে পড়ে। -হুম বুঝলাম।আপনি যেহেতু অকৃর বন্ধু ছিলেন।তাহলে তাকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে,তা নিশ্চয়ই জানেন! -হ্যা,চার নাম্বার রোডে তেতাল্লিশ নাম্বার বাড়ির চিলেকোঠায়! -পালাবে না? -নো,সম্ভবত পালাবে না।ওর ধারণা আমি পুলিশকে বলবো না।আর যদিও বলি,তাহলে পুলিশ আসবে না!অকৃ নিজেকে মহাপুরুষ ভাবে! দুপুর দুইটা।এলাকা নিস্তব্ধ, কেউ অফিসে বিশ্রাম নিচ্ছে,অথবা কেউবা বাসায় ঘুমাচ্ছে।তেতাল্লিশ নাম্বার বাড়ির চারপাশের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।কিন্তু তবুও মানুষ সেই মহাপুরুষকে একবার দেখার জন্য ভীড় করছে। ওসি সাহেব আবেদন করে র্যাবের সাহায্য নিয়েছেন।বুকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট আর হাতে রাইফেল।তেতাল্লিশ নাম্বার বাড়িটা ঘিরে রাখা হয়েছে।যেন যুদ্ধের প্রস্তুতি! টিম ক্যাপ্টেন মাইকে এ্যানাউন্স করলেন, "অকৃ,আপনাকে বলা হচ্ছে।আপনি আত্মসমর্পণ করুন।কোন রকম ঝামেলা...." ঘোষণা শেষ হয়নি।লোহার গেট দিয়ে বের হয়ে এলো এক যুবক।সবাই বন্দুক তাক করে আছে তার দিকে,বিপদজনক কিছু ঘটার আগেই গুলি করার আদেশ আছে।পায়ে চটি জুতা,পরনে কালো জিন্স আর খয়েরি কালারের শার্ট।হাত দুটো উপরে তোলা। ক্যাপ্টেন আবার বললেন, "আপনার কাছে কোন বিপদজনক কিছু থাকলে ফেলে দিন!" শান্তস্বরে অকৃ বলল, -আমার কাছে কোন কিছুই নেই।শুধু ডান পকেটে বিশ টাকা আছে। ওসি সাহেব এগিয়ে গেলেন।হাতে বন্দুক। -আপনাকে এ্যারেস্ট করা হচ্ছে ধর্ষনের মামলায়। -শুধু ধর্ষনের মামলায়?বাকিগুলোর কি হবে? -সেগুলোর খবর আমি জানি না।আমার কাছে এই একটি মামলা আছে,আপনাকে ধরার জন্য।আপনি কি সত্যিই অকৃ? -যে মামলা করেছে তাকেই জিজ্ঞাসা করুন না! হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে পুলিশ অকৃকে প্রিজন ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে গেল।হাজার হাজার মানুষ তাকিয়ে আছে সেদিকে। পরদিন টিভি নিউজ,পত্রিকায় একটাই খবর "অকৃ!" "সিরিয়াল কিলার অকৃ গ্রেফতার!" "ধর্ষক অকৃর মৃত্যু চাই!" "ধর্ষকের আজরাইল ধর্ষক!" শিরোনাম আর শিরোনামে পত্রিকায়! আদালত ঘোষণা দিল, "এই আদালত সিরিয়াল কিলার অকৃকে ৭৬ জনকে খুন,২ জনকে খুন করার চেষ্টা করা এবং ১ নারীকে ধর্ষন করা নিয়ে মোট ৮৩টি মামলায়, ১১ জনের একটি বিশেষ টিমের ১১টি গুলিতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার আদেশ দিচ্ছে।কেননা সে দেশের এবং বাঙালি জাতি উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।তার পক্ষ থেকে কোন আপিল গ্রহণযোগ্য নয়। দ্য কেস ইজ ক্লোজড!" অকৃ এক জঙ্গলের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে,হাত পিছনে নিয়ে পরিয়ে রাখা হয়েছে হ্যান্ডকাপ।চারপাশে ১১জন কালো পোশাক পরিহিত একটি দল তাকে ঘিরে আছে।তারা পুলিশ না র্যাব বুঝা যাচ্ছে না।গ্রুপ ক্যাপ্টেন বলেন, -আপনার শেষ ইচ্ছে.. -সকল ধর্ষকের মৃত্যু চাই! একজন সময় দেখে বলে উঠল, -ফায়ার! চোখের পলকে এক এক করে এগারটি গুলি তার বুকে,পিঠে,পায়ে ঢুকে গেল।ঢলে পড়ল অকৃর শরীর মাটিতে,ধপাশ করে পড়ে গেল সে।দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।নীল আকাশে চিল উড়ছে।কালো কাকগুলো এসে তার দেহ থেকে বের হওয়া রক্ত খাচ্ছে।একটি নেড়ি কুকুর তার বুকের উপর চেপে বসল।খুবলে খুবলে অকৃর মাংস খাচ্ছে।চিলটা এখনও আকাশে উড়ছে। কুকুরটা যখন মাংস খেতে খেতে তার হৃদপিন্ড বের করে ফেলল,তখন চিলটা উড়ে এসে বসল তার বুকে।তার দাড়ালো ঠোঁট দিয়ে সাহসী পিন্ডটা হেচকা টান দিয়ে বের করে, নিয়ে উড়ে গেল। ব্যথায় ককিয়ে উঠল অকৃ।মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে,তবুও সে ঘামছে।ঘামছে তো ঘামছে।ভিজে সে পুরো একাকার।এটি কি স্বপ্ন ছিল না,দুঃস্বপ্ন? বাইরে আলো ফুটেছে।শহরের কাকগুলো ডাকছে,চড়ুই কিচিরমিচির করছে।সকালের ঠান্ডা বাতাস লাগছে তার গায়ে।তবুও সে ঘামছে।ভয়ে!মৃত্যুর ভয়ে! অকৃর বের হওয়ার সময় হয়ে গেছে।এখনই তাকে বের হতে হবে।শান্তি পাচ্ছে না সে,অস্থিরতা কাজ করছে তার মাঝে!কানে সামনে তাকে কে যেন বলছে, "অকৃ,তুই পালিয়ে যা.." #চতুর্থ_পর্ব -কত? নিশিকন্যা নিপা হালকা হাসছিল।হঠাৎ ছেলেটা যে এভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করবে বুঝতে পারেনি।হয়তো ছেলেটা এই পথে নতুন!রাত এগারোটা,ল্যামপোস্টের আলো জ্বলছে।অল্প বয়সের ছেলেটা সাদা একটি শার্ট পরে আছে,দেখতে সুন্দরই লাগছে!কি যেন একটা একটু পর পর খাচ্ছে।তাকে অবাক করে দিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করল, -কত নেন একরাত? -কেউ ৫০০ দেয়, কেউবা ১০০০।তোমার যা ইচ্ছে দিতে পারো! -এই নেন ২০০০ টাকা।আজ বাসায় চলে যান,আম্মুর পাশে থাকুন দুদিন! -ফ্রি টাকা দিবে কেন?তোমার আমাকে প্রয়োজন নেই? -না,দুদিন পাপ থেকে বিরত থাকুন।আমার কাছে আর নেই,থাকলে দিয়ে দিতাম। -তুমি কে?কেনইবা আমাকে এভাবে টাকা দিচ্ছো? -হয়তো আমি আপনার ভাই।ভাই হিসেবে বোনকে টাকা দিতে তো পারি। -নাম কি তোমার? -অকৃ! -অকৃ?তুমি সেই অকৃ?সিরিয়াল কিলার?খুনি? -আমি কোন খুনি নই।আমি পাপের বিচার করি। -সামনে একটা বেঞ্চ আছে,বসবে? নিপা অকৃকে দেখে নিল।নিষ্পাপ মুখ তার।সে নাকি সিরিয়াল কিলার!অদ্ভুত এই দুনিয়া!দুনিয়াটা কত নিষ্ঠুর! -বাদাম খাবেন বুবু?আমি আপনাকে বুবু বলে ডাকতে পারি? -তোমার বোন নেই? -বুবু,আমার কেউই নেই।একা আমি এই দুনিয়ায়! -বাবা,মা? -সবাই একসাথেই চলে গেছে ওপারে, জানো বুবু। -কিভাবে? -আমার বোনের নাম ছিল কামিনী।কবি কামিনী রায়ের মতোই ছিল।কি সুন্দর ভাবে কবিতা আবৃত্তি করতো!আমাকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতো।ও পড়তো দশম শ্রেণীতে।এলাকায় একমাত্র বৃত্তি পাওয়া ছাত্রী,খুব মেধাবী।আমি ছোট ছিলাম বলে আমাকে খুব আদর করতো। কিন্তু আমাদের আনন্দে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এলাকার মাতব্বর।তার ছেলে ছিল বখাটে।আমার বোনকে পছন্দ করতো।মাতব্বর একদিন এসে বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।বাবা না করে দেয়।এরপর সবঠিক ছিল। কিন্তু সেই ছেলে বোনকে রাস্তায়,স্কুলের সামনে বারবার খারাপ প্রস্তাব দিতো।বাড়িতে সবাই আমরা সেটা জানতাম।কিন্তু একদিন বোনকে স্কুলের সামনে থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়,ধর্ষন করে। তারপর অনেক কিছুই ঘটে, বাবা মামলা করতে যায়।পুলিশ মামলা নেয় না।এলাকায় সবাই বোনকে খারাপ বলতে থাকে।আমি বোনের সাথেই ঘুমাতাম। সেদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি বোন ফ্যানের সাথে ঝুলছে।আত্মহত্যা করে।তার চোখ দুটো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল! বলছিল,"ভাই প্রতিশোধ নিবি না!" চারদিকে আমি বোনের সেই চোখ দুটো দেখতে পাই আর আমাকে বলে,"ভাই প্রতিশোধ!" তারপর বাবাও সম্মানের কারণে বোনের পথ ধরে।মা,বাবা আর বোনের শোকে সেও চলে যায়।আমি হয়ে যাই এতিম। মাতব্বর আমাকে ৫০০টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে চলে যেতে।বাড়িটা তারা দখল করে। সেই রাতে আমি মাতব্বরকে হত্যা করি,কিন্তু বেচে যায় তার ছেলে।পালিয়ে যায় আমেরিকায়।আর হাতের নাগালে পাইনি।সেই থেকে আমি প্রতিশোধের নেশায় পথে পথে.... নিপা তাকিয়ে থাকে অকৃর দিকে।অকৃর চোখ দিয়ে অবিরাম অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।যেন এর শেষ নেই! -বুবু তুমি কেন এই পথে রোজ থাকো? -তোমার বোনের মতো আমিও হতভাগা।তাই পথে পথে আজ। -কেন? কে নামিয়েছে তোমায় এই পথে? -বেশিদিন নয়,এই একমাস আগে।বাবা,মা শখ করে নাম রেখেছিল আমার,নিপা।কলেজে পড়তাম।বাবা একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতো।বাবা,মার একমাত্র সন্তান আমি।আমাদের দুবেলা খেয়ে ভালোই চলছিল।কিন্তু একদিন রোড এক্সিডেন্টে বাবা মারা যায়।এই খবর শুনে মা ব্রেন স্ট্রোক করে।আমরা মধ্যবিত্ত ছিলাম,টাকা পয়সা কিছু ছিল।যা ছিল মার চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে যায়।আত্মীয়স্বজনরা আমাদের আর খোজ খবর নেয় না।পরিবারের দ্বায়িত্ব আমাকে নিতে হয়। গার্মেন্টসে চাকরি পাই।৬ হাজার টাকা বেতন।একদিন ম্যানেজার সাহেব ডাক দিয়ে একটি রুমে কাজ দেন।আমি কাজ করতে থাকি।আমাদের ছুটি হয়ে যায়।ম্যানেজার বলে,কাজটা শেষ করে যেতে। এক্সট্রা টাকা দিবে। সবাই চলে যাওয়ার পর ম্যানেজার আমার সাথে জোর করে.... নিপাও কেদে ফেলে।নিজের ইজ্জতের কথা মুখ ফুটে বলা কতটা লজ্জার কথা!অকৃ বলে, -বুবু,তুমি পুলিশের কাছে যাওনি? -গেছিলাম ভাই।ওসি বলে, "তোগো রে আমি চিনি।দিনে বেলা গার্মেন্টসের লোকদের নাচাস,আর রাইতে পথ নাচাস।যা যা ভাগ.. আর শোন জোনাকিরে তো চিনিস।ও আমার কাছে আয়ে,মাঝে মাঝে তুই আসিস।ভালো টাকা পাবি!" -জোনাকি কে বুবু? তোমার কাছে কোন প্রমাণ ছিল না? -না ভাই,আমি বুঝতে পারিনি।জোনাকি হলো এই এলাকার পতিতাদের সর্দার। তারপর সেই কাজটা ছেড়ে দেই।অন্য কাজ খোজ করি।পাই না।মার জন্য ঔষধ প্রয়োজন হয়।একদিন রাতে এক ভদ্রলোক বলে,৩হাজার টাকায় হবে? সেই থেকে আমার শুরু এই পথসেবা.. -বুবু, তুমি এই কাজ ছেড়ে দিবা? আমার কাছে একটা টিউশনি আছে।আমাদের বাড়ির বাড়িওয়ালার মেয়েরে পড়াবে।আমি তোমাকে দিয়ে দিবো। -আমার জন্য এত কিছু করবে কেন ভাই? -তোমার ভাই যে তাই!বুবু তুমি বিয়ে করবে।আমি একটি চিঠি লিখলে,তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে।ভাগ্যে থাকলে পুলিশ অফিসারও পেতে পারো! -না রে ভাই,পুলিশকে আমি ঘৃণা করি। -আচ্ছা ঠিক আছে।আমি বলে দিবো,ভালো ছেলে দেওয়ার জন্য। -কার কাছে বলবে ভাই? -আমার লোক আছে।খুব ভালো লোক।কিন্তু কারো কাছে আমার নাম বলবে না।বলবে আমার ভালো নাম! -তোমার ভালো নাম কি? রাত দুইটা।আকাশে মেঘ জমছে।ঠান্ডা বাতাস প্রকৃতির মাঝে বইছে।এই সময় অকৃর হাটতে ভালো লাগে।সে হাটছে... -কোথায় যাচ্ছো? -থানায়। -কেন?খুন করতে ওসিকে? -দেখা সাক্ষাৎ করে আসি।অনেক দিন হলো থানায় যাই না। -তোমার প্রতিশোধ নেওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। -তোমায় কে বলল? -তোমার অনুমান,কারণ তুমি মহাপুরুষ! সকাল আটটা।থানার সামনে সাংবাদিকদের ভীড়।থানার ওসি খুন হয়েছে।সাংবাদিকদের সাথে মিশে আছে আম জনতা।আইজিপির গাড়ি মাত্র এসেছে।এত বড় থানার মাঝে,এত পুলিশের নিরাপত্তার মাঝে ওসি খুন।থানার সবাই ভয়ে আছে।গলা কেটে,বুকের রক্ত দিয়ে টেবিলের কাচে লেখা, "বিচার চাইতে এসেছিলাম! বিচার করো নি কেন?" আইজিপি অফিসার ওসির লাশটা দেখে বলল, -সিরিয়াল কিলার!তোমরা কোথায় ছিলে সবাই? থানার এক পুলিশ অফিসার বলল, -স্যার কিছু লোকদের বস্তিতে পাঠিয়ে ছিলেন বাংলা আনার জন্য! -থানায় মদ!খুব ইন্টারেস্টিং!বাকিরা? -কেউ গিয়েছিল বিরিয়ানি আনতে।তিনি রোজ রাতে এই রকম খাবার খান।আর বাকি আমরা ভিতরে,কেননা.... -কেননা কি? পুলিশ অফিসার ভয়ে কাপছে। -কেননা স্যার,প্রতি রাতে তার কাছে এক মহিলা আসে। -ওয়াও!থানার ওসি পতিতার সাথে!তাহলে খুন করেছে কে?সেই পতিতা? -না স্যার,আমি একজনকে কাল থানার দিকে আসতে দেখছিলাম।চেহারা দেখা যাচ্ছিল না তার। এক কনেস্টেবল বলে উঠল। আইজিপি রাগে এবার বলল, -তুমি কোথায় গিয়েছিলে বাবা? -স্যারের বিরিয়ানি আনতে! বাইরে থেকে এক পুলিশ অফিসার ঢুকল থানায়।স্যালুট দিয়ে বলল, -স্যার,আজ সকালে একই ভাবে আরেকটি খুন হয়েছে।জিম গার্মেন্টসের ম্যানেজার রফিক।তারও গলা কেটে কণ্ঠনালি বের করে ফেলা হয়েছে।বুক লম্বা ভাবে ছিড়ে ফেলা হয়েছে। আইজিপি অফিসার নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে বলল, -দুটো খুনের সাথে এক যোগসূত্র রয়েছে!লাশ পরিষ্কার করে দাফন দিয়ে দাও।অপমৃত্যু নামে ডায়রি করো। আইজিপি অফিসার থানা থেকে বের হয়ে আসলেন।সাংবাদিকরা দৌড়ে আসল, -স্যার,স্যার কিভাবে খুন হয়েছে? কে খুন করেছে? কারা এর সাথে জড়িত? কোন সিরিয়াল কিলার না রাজনীতিক শিকার? আইজিপি অফিসার গাড়িতে প্রবেশ করতে যেয়েও থেমে গেলেন, -জানতে চান কে খুন করেছে পুলিশ অফিসারকে? সাংবাদিক একজন বলল, -কে স্যার? -সুবোধ বালক!প্রতিশোধের নেশায় যে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে! যার নাম শুনলে আন্ডারগ্রাউন্ড,এমনকি পুলিশও ভয় পেয়ে যায়! সেই ছেলে! যে নিজেকে মহাপুরুষ ভাবে! সেই সিরিয়াল কিলার,অকৃ! ______________________________________________
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা।সূর্য অস্ত গিয়েছে কিছুক্ষণ।আকাশে কালো মেঘ।ঠান্ডা বাতাস বইছে।এ সময় অকৃর হাটতে ভালো লাগে।খুব ভালো।মেঘ জমায় রাস্তায় মানুষের চলাচলও কম।অকৃর হাটার আজ উদ্দেশ্য রয়েছে।সে হাটছে... আইজিপি পুলিশ অফিসারের বাড়ি।সাদা রঙের সুন্দর বাড়ি।বাইরে থেকে বুঝা যায় না কালো লোহার বিশাল গেটের জন্য।গেট বন্ধ।অকৃর কলিংবেল চাপল।আজকাল পথের গেটে কলিংবেল সচারচর দেখা যায়,দুষ্টু ছেলেরা দুষ্টুমি করে তাই।হয়তো এটা পুলিশের বাড়ি বলে রয়েছে। -কি চাই ছোকরা? অকৃ ভেবেছিল কোন পুলিশ অফিসার হয়তো খুলবে।তাড়িয়ে,বাড়িয়ে দিবে!তা না হয়ে এক বৃদ্ধলোক খোলল।গায়ে সিকিউরিটি পোশাক।কর্কশ গলায় বলছে আবার ছোকরা।অকৃ বলল, -স্যারের সাথে দেখা করতে চাই! -স্যার ব্যস্ত রয়েছে।দেখা করা যাবে না। অকৃ যা ভেবেছিল তাই "দেখা করা যাবে না" বাক্যটি শুনতে হবে।মিথ্যে বললে হয়তো ঢুকতে দিবে।তা বলা যাবে না,মার আদেশ! -চাচা স্যারকে বলুন,আপনার আর্টিকেল এসেছে। বৃদ্ধ একবার অকৃকে ভালোমতো দেখে ভিতরে চলে গেল।বৃদ্ধের মনে হয় সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার আছে।চোখ দিয়েই মানুষ পরীক্ষা করে নিতে পারে।বাড়ির দারোয়ান না হয়ে,গোয়েন্দা হলে ভালো নাম করতে পারতো। -স্যার বলেছেন,আর্টিকেল নিয়ে অফিসে দেখা করতে।এখন যান,উনি ব্যস্ত। না কাজ হলো না।আইজিপি স্যার বুঝতে পারেনি।অকৃ ভালো মতো ভেবে আবার বলল, -চাচা আরেক বার যেয়ে বলুন, স্যার আপনার সুবোধ বালক আর্টিকেল এসেছে।আমি যা বলেছি তাই বলবেন। বৃদ্ধ মনে হয় এবার রেগেই গেলেন। -বললাম না স্যার ব্যস্ত দেখা করতে পারবেন না!যাও.. -আপনি না বললে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। অকৃ কাদো কাদো ভাব নিয়ে বলল।হয়তো বৃদ্ধের মন গলেছে।বুড়া মানুষের মন বরফের মতো,একটুতেই গলে যায়। এবার ঢুকতে দিয়েছে।বিরাট বাড়ি।টাকা পয়সার কমতি নেই অফিসারের।তাই ঢাকা শহরে পরিবার নিয়েই বিশাল বাড়িতে থাকেন।গেস্ট আসলে ডাইনিং রুমে বসতে হয়,কিন্তু অকৃর জন্য লাইব্রেরিতে ডাক পড়েছে। আসলে বড়লোকরা অনেক কিছুই করেন।আজকাল ব্যক্তিগত লাইব্রেরি দেখা যায় না,তবুও তার বাড়িতে আছে।রুচিশীল ব্যক্তি বলা যেতে।বাড়িতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না,হয়তো বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। দোতলার সিড়ি দিয়ে উঠে ডান পাশেই লাইব্রেরি। রুহুল আমিন।আইজিপি অফিসার।বয়স চল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশ হবে।ভুড়ি নেই!উনি মনে হয় ঘুস খান না।পুলিশ যারা ঘুস খায়,তাদের একেকজনের বিশাল ভুড়ি।তাকে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন বলা যেতে পারে! একটি টেবিলে বসে আসেন।সামনে ল্যাপটপ আর একটি ফাইল।জরুরী কাজ।অকৃকে একবার দেখে বললেন, -বসো। অকৃ চুপচাপ বসে আছে।তিনি কাজে ব্যস্ত।কিভাবে কথা শুরু করবে ভাবছে অকৃ।পুলিশদের তাদের কাজে বাধা দিতে নেই,এতে গারদে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।চারপাশে কত রকমের বই,অকৃ বারবার সেগুলো তাকিয়ে দেখছে।অনুমতি ছাড়া সেগুলো ধরাও নিষেধ। -মামা চা! অকৃ দেখল সুন্দরী এক মেয়ে এক কাপ চা নিয়ে এসেছে।মেয়েটাকে আগে কোথাও দেখেছে সে।কোথায় যেন?হ্যা বাসে।সেদিন ভালোমতো দেখা হয়নি তাকে।আজ বেশ সুন্দরী লাগছে।আজ হালকা কাজল দিয়েছে।চুলগুলো একসাথে করে ডান দিক দিয়ে সামনে নিয়ে এসেছে।পরনে সাদা থ্রিপিস।যেন পুরো রুপকথার সিনড্রেলা।কেমন যেন ভালো লাগছে আজ মেয়েটাকে।মেয়েটা অকৃকে বলল, -আপনি? মামা উনি হলেন... রুহুল আমিন সাহেব মেয়েটাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, -আমি চিনি মা।তুমি যাও আরেকটা চা নিয়ে এসো।সাথে বিস্কুট।তোমার মামিকে বলো নাস্তা দিতে,মেহমান এসেছে। মেয়েটা চলে গেল।অকৃ এবার কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। -আমি কেন এসেছি আপনার জানতে ইচ্ছে করে না? -সবকিছু জানতে হয় না,কিছু জিনিস জেনে নিতে হয়।তাহলে মহাপুরুষ হওয়া যায়। -আপনি মহাপুরুষ হওয়ার চেষ্টা করছেন? -না।সেদিন তুমি মহাপুরুষের একটি গুন বলেছিলে,তাই সেটা মানছি।আর্টিকেলটা পড়েছিলে? -জি না। -পেপার বিক্রি করো,আর তুমি আর্টিকেল পড়নি? -নিজের স্টোরি পড়লে,মাঝে মাঝে মনে অহংকার সৃষ্টি হয়।তাহলে মহাপুরুষ হওয়া যায় না। -তুমি যে পেপার বিক্রি করো সেটা স্টোরিতে বলিনি।তা না হলে গোয়েন্দারা তোমাকে বের করে ফেলতো। -আমি স্বাভাবিক মানুষ হয়ে যেতে চাই!আর খুন করবো না! -তোমার প্রতিশোধ নেওয়া শেষ? তাহলে তো তোমাকে আবার কারাগারে বন্দি করতে হবে।চার বছর আগে তো বের করে দিয়েছিলাম।এবার.. মেয়েটা আবার একটি ট্রেতে করে নাস্তা নিয়ে এসেছে।রুহুল আমিন সাহেব বললেন, -মা কিছু বলবে? মেয়েটা মাথা নাড়ল। -তাহলে তুমি যাও।ওর সাথে কিছু কথা আছে। -বসুক না স্যার।আমার সম্পর্কে ও জানতে চায়।বসতে পারবে প্রশ্নহীন। -আচ্ছা বসুক।ও আমার ভাগ্নি নন্দিনী।চিনো তো ওকে। নন্দিনী বসল ওদের পাশে।অকৃ দেখছে,কি নিষ্পাপ চেহারা! -কি যেন বলছিলে অকৃ? -আমি আমার প্রতিশোধ শেষ করে ভালো হয়ে যেতে চাই। -আমি তো ভেবেছিলাম,তুমি অন্যান্য সিরিয়াল কিলারের মতো ৯৯টা খুন করে ১০০ নাম্বারে নিজেকে খুন করবে!৮২টি খুন করলে,আর তো বাকি নেই! -ভুল ১২৭টি খুন করেছি আমি।আর নয়.. -আমাকে কি করতে হবে? -আমি আমেরিকা যেতে চাই! -খুন করতে?আর তুমি যে কত বড় সিরিয়াল কিলার,তোমার তো টাকার অভাব থাকার কথা না! -টাকার জন্য আমি খুন করিনি,অন্যায় বিচার করার জন্য। -তোমাকে আমি আমেরিকায় পাঠাতে পারি! নন্দিনী আর চুপ থাকতে পারল না।প্রশ্ন করে বসল তার মামাকে, -মামা সে এত বড় খুনি,তুমি জানো।তবুও জেলে পাঠাচ্ছো না,তোমার সামনে বসে আছে।আবার খুন করতে সাহায্য করছো।সে কি তোমার দাবার গুটি,না তুমি তার দাবার গুটি? অকৃ এবং রুহুল আমিন সাহেব দুজন নন্দিনীর দিকে তাকাল। -মা,আমরা পুলিশ অফিসার।অনেক বড় বড় আসামি ধরে আনি।কিন্তু আনার পরে আর শান্তি নেই।মন্ত্রী মিনিস্টার ফোন দেয়।বলে,তার লোক।যদি বলি স্যার বে আইনি অস্ত্র পাওয়া গেছে।বলবে,ওগুলো সরকারি সম্পদ।সরকার অন্যায়ের পথে আছে।ফলে অনেক অপরাধীর বিচার হয় না।সে বিচার অকৃ করে দেয়। হ্যা, সে একদিক দিয়ে খারাপ কাজ করছে,মানুষ খুন করছে।কিন্তু সে মানুষ যে বড় অন্যায় করেছে।অকৃ একদিক দিয়ে সঠিক পথে আছে।তাই আমি ওকে সার্পোট দেই। নন্দিনী চুপ গেল।অকৃ বলল, -আমাকে আমেরিকা পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। -হুম তুমি আমেরিকা যেতে পারবে।কিন্তু খুন করে ফিরে আসতে পারবে না।পুলিশ তোমাকে ধরে ফেলবে।কারণ তোমাকে ধরার অনেক প্রমাণ তাদের কাছে আছে।শুধু তোমাকে পাচ্ছে না। -তাহলে? -অন্য পথ বের করো! -আরেকটি পথা আছে,আমাকে মেরে ফেলুন!সে আসবে! -তোমাকে মারবো?কি বলছো এসব? -হ্যা,আমার মৃত্যুর খবর তাকে বাংলাদেশে আনাবে।আর সে আসবে,তাকে বাংলাদেশে প্রয়োজন আছে। -কিভাবে? -একটি বিশ বছরের ছেলের লাশ আমি মর্গ থেকে চুরি করেছি।সেটাকে আমার বলে আপনি চালিয়ে দিবেন।ব্যস গল্প শেষ! -জিনিয়াস!ইনকাউন্টার করে দিয়েছি তাই? -হুম! -হবে।তবে এক শর্তে! -কি শর্ত? -আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হবে,যা আজো আমার অজানা।সেই চার বছর আগে দেখা হয়েছিল,আর কবে যে দেখা পাবো জানি না!আজই উত্তর দিতে হবে। -বলুন.. -আমার প্রথম প্রশ্ন,সেদিন নন্দিনীকে সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে।তোমাকে দেখা গেল না কেন? -সেখানে যে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে আমি জানি না।তাই বলতে পারছি না কেন আমাকে দেখা যায় নি!কিভাবে ছিল সেই ক্যামেরা! -হুম,তারপর আমি ছোটবেলা থেকে অনেক সিরিয়াল কিলার দেখেছি,তারা বাচতে পারেনি।কিন্তু তুমি এতগুলো খুন করে কিভাবে বেচে আছো? -সিরিয়াল কিলার দুই ধরনের।এক,একদল মদ খেয়ে খুন করে।দুই,দ্বিতীয় দিল মানসিক রোগে আক্রান্ত।তাই তারা খুন করে প্রমাণ রেখে আসে।আমি খুন করেছি ঠান্ডা মাথায়,শান্ত ধীরভাবে।খুন করতে গিয়েছি,সে বুঝতে পারেনি।খুন করার আগে কথা বললে ঝামেলা।হাতাহাতি হয়,তাই চুপচাপ খুন করে তারপর কথা বলি।যতটুকু সম্ভব প্রমাণ রাখিনি।তাই বেচে গেছি। -তুমি মাথা ঠান্ডা রেখেছো কিভাবে?খুন একটি ড্যাঞ্জারাস জিনিস! -আমি খুনকে হোমওয়ার্ক হিসেবে নিয়েছি।বৃহস্পতিবার ছাত্ররা যখন হোমওয়ার্ক করে মাথা ঠান্ডা রেখে করে,কারণ হাতে শুক্রবার রয়েছে। -খুব ইন্টারেস্টিং!এখন বলো পুলিশ ও আন্ডারগ্রাউন্ড কিলাররা তোমাকে ভয় পায় কেন?আমার কাছে অল্প রিপোর্ট আছে,তবুও তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই! -মিরপুর থানার ওসি,খুব খারাপ লোক।ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েটাকে চড় দিল।আমি খবর পেয়ে উড়ো চিঠি দিলাম,মাফ চেয়ে নিতে।কথা মানেনি।তাই তার হাতটা পুড়িয়ে দিতে চাই।কেরোসিনটা তার মুখেও পড়ে,ফলে মুখটা পুড়ে যায়।সেখান থেকে পালাতে পারিনি,পুলিশ সেই এলাকা ঘিরে ফেলে।আমি দুদিন একবাড়ির টাংকিতে লুকিয়ে ছিলাম।ফলে রটে যায় আমি ভয়ানক! -তারপর? -সেই পুলিশ অফিসার আর এক মেয়ের বাড়ি ভাঙ্গচুর করা বখাটেরা।পুলিশ মামলা নিল না।বললাম,পুলিশ এক্সিডেন্ট করবে।তাই চাকা একটা খুলে দিয়েছিলাম।সেই দূর্ঘটনায় সে যে পঙ্গু হবে জানা ছিল না।বখাটেদের রাতে অন্ধকারে এলোপাথাড়ি মারি।ওরা ড্রিঙ্কস করেছিল,তাই সে বার বেচে যাই। -আর আন্ডারগ্রাউন্ড? -বাংলাবাজার যাচ্ছিলাম বই কেনার জন্য,হেটে।ন্যাশনাল হাসপাতালের কাছে এসে শুনি পুরান ঢাকার টাক্কু তারেক কাজের বুয়াকে রেপ করেছে।কাজের মহিলা গরিব বলে বিচার পায় নি।আমি সেদিন আর ফিরিনি।খোজ করি টাক্কু তারেকের।পেয়েও যাই।তার বাড়িতে যেয়ে মেরে ফেলি,আমার স্টাইলে।নোট দিয়ে আসি,"মার বয়সীকে কিভাবে?ডন হয়ে গেছ?" পুলিশ বলে দেয়,খুন আমি করেছি।ছোটখাটো একটু নাম হয় আমার। তারপর,এক পরিচিত ভাই আমাকে খবর দেয়।গোপীবাগের ব্ল্যাক সাদ্দামের ছেলে এক মেয়েকে রেপ করে,তারপর মেয়েটাকে সাদ্দাম মেরে ফেলে।সেখানে সাদ্দাম ও তার ছেলেসহ মোট ১২ জনকে খুন করি।একটি গুলি লাগে আমার হাতে।লোক এসে পড়ে তখন,বেচে যাই। -সেখান থেকেও বেচে গেলে?কিভাবে? -সাদ্দামের স্ত্রী,খুব ভালো মহিলা।মহিলাকে সাদ্দাম অনেক অত্যাচার করতো,তার কাজে বাধা দিতো বলে।আমাকে তাদের লোক বলে সেখান থেকে বাচিয়ে দেয়। তারপর পুরো ঢাকার ডন লাল ভাই আমার খোজ করে,আমাকে মেরে ফেলার জন্য।এ খবরটা ব্ল্যাক সাদ্দামের স্ত্রী আমাকে দেয়।দেখা করি লাল ভায়ের সাথে,খুব সাহস হয়ে গিয়েছিল মনে।থ্রেট দিয়ে আসি।মুখ ঢাকা ছিল বলে,আমাকে আর ধরতে পারেনি।এখনও সে আমাকে খোজছে,মেরে ফেলার জন্য। -হুম,খুব পাওয়ারফুল হয়ে গেছ।একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন।শোনেছি,তুমি বিড়বিড় করে কার সাথে যেন কথা বলো।কে সে? -আমার চিন্তা আমার সাথে কথা বলে। -তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?মাথায় তোমার সমস্যা হয়েছে,নিউরোলজি ডাক্তার দেখাও। -না,আমার প্রতিশোধ নেওয়ায় সে সাহায্য করে। -আচ্ছা বাদ দাও।তোমার কোন আত্মীয় নেই? -আছে,চিনবে না আমাকে এখন। -এখন বলো,নিপা কে ছিল? -পথে পরিচয়,পথের বোন।ভালো মেয়ে। -হুম ভালো ছেলে পাঠিয়েছি।খুব টাকাওয়ালা ছেলে।বেচারা কষ্টে ছিল,প্রথম স্ত্রী বিয়ের কয়েকদিন পর মারা যায়।এখন ওরা ভালোই আছে।তোমার লোক,তাই মাঝে মাঝে খোঁজ খবর নেই। -ধন্যবাদ। -শেষ প্রশ্ন,তোমার মতো অকৃ হতে হলে কি করতে হবে? -প্রবল ইচ্ছে শক্তি।ইচ্ছে কারণে মানুষ আজ মঙ্গল গ্রহে যেতে পারছে,সেভাবেই ইচ্ছের কারণে সব হয়।একজন অকৃ হতে হলে ইচ্ছে শক্তি লাগবে আর ভয়কে জয় করতে হবে। -মহাপুরুষ সম্পর্কে তুমি কি বলবে? -আপনার যে ছেলেটা আসছে,সে মহাপুরুষ হবে। রুহুল আমিন সাহেব এবার খুব অবাক হয়ে গেলেন।নন্দিনী যেন আকাশ থেকে পড়ল।আমিন সাহেব বললেন, -আমার স্ত্রী গর্ভবতী, তুমি জানলে কিভাবে?তোমার সাথে দেখা হয়েছে।দেখা হলেও তো বলতে পারতে না।সে যে গর্ভবতী,শুধু আমি আর সে জানি।আর কেউ নয়।কারণ মাত্র দুই মাস চলে।আর ছেলে হবে সেটা কে বলল? -আমার চিন্তা,আমার অনুমান।বিশ্বাস হলে মিলিয়ে নিয়েন। -বিশ্বাস করতে হচ্ছে তোমার অনুমান ঠিক। আমিন সাহেব অকৃকে রাতের খাবার না খেয়ে যেতে দিলেন না।আমিন সাহেবের স্ত্রী ভালো মহিলা।অকৃকে ছেলের মতো আদর করে খাওয়ালেন।নন্দিনী আর অকৃর মাঝে এক দূর্বলতা কাজ করছে,হয়তো ভালো লাগা!অকৃ আমিন সাহেবের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার সময়,নন্দিনী বলল, -অকৃ,তোমার ভালো নাম নেই? -আছে।অকৃ সৃষ্টি হয়েছে আকিব থেকে।আর বাবা,মা ডাকতো কাউসার বলে! -আমাদের আবার কবে দেখা হবে? -যেদিন এই ধরা ফুলের সাজে সাজবে! অকৃর মৃত্যু হয়েছে।ছড়িয়ে পড়ল এই খবর দেশের আনাচে কানাচে।দেশে যেন শোক শুরু হয়ে গেছে।পত্রিকায় বিভিন্ন ভাবে খবর প্রকাশ করছে।পুলিশ থেকে বলা হয়েছে,"অকৃকে এনকাউন্টার করে,পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।যাতে তার দেহ নিয়ে কোন ঝামেলা না হয়!" কলেজ,ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা শোক র্যালি করছে।অকৃ তাদের আইডল হয়ে গিয়েছিল।শোক মেতে উঠেছে দেশ।সন্ধ্যার অন্ধকারে মোমবাতি র্যালি করছে ছেলেমেয়েরা।কবি কবিতা,লেখক লিখছে গল্প। এর মাঝে অকৃ হেটে যাচ্ছে,খালি পথের মাঝে।হাহাকার যেন করছে এই শহর।কোথাও শোক র্যালি,কোথাও শূন্যতা!পুরো শহর যেন কাদছে!অকৃ হাটছে ফুটপাত ধরে,অকৃ দাঁড়িয়ে পড়ল। -চাচা,কি করছেন? -অকৃকে নিয়ে লিখছি। -অকৃ আপনার কি এমন করেছে? -সে আমার মেয়ের ইজ্জত বাচিয়েছে,বাজান! লোকটার সেই দেয়ালের লেখাটা পড়ে,অকৃ হেটে চলে গেল দূর থেকে দূরে,বহুদূরে!আধারে মিশে গেল সে!অকৃ আর অকৃ নেই!মহাপুরুষ! আজ নিলয়ের বোনের বিয়ে হয়েছে।একমাত্র বোন নুপুর।খুব ভালো জায়গায় বিয়ে হয়েছে।বাড়িটা এখন শূন্য।মেহমানরা সবাই চলে গেছে।বাড়ির মহিলা ভিতরে বসে গল্প করছে,তাদের হাসির আওয়াজ বাইরে আসছে।সিগারেট ধরালো সে।ধোয়া মিশে যাচ্ছে আঁধারে।গ্রামের পরিবেশ খুব অন্ধকার।নিলয় তাকিয়ে আছে সেই ধোয়ার দিকে।যেখানে আঁধারের সাথে,তা মিশে গেছে।নিলয় তাকিয়ে আছে সেদিকে।সেই আঁধার থেকে যেন কে বেরিয়ে আসল।মহাপুরুষ! -নিলয়! -কে তুমি? -আমাকে চিনতে পারছো না?আমি কামিনী! -কামিনী?সে তো মেয়ে,কিন্তু তুমি ছেলে। -হ্যা,আমি ছেলে।আমি কামিনী,কামিনীর ভাই। -কাউসার? -হ্যা,মনে পড়ে সেই সন্ধ্যেবেলার কথা।আমার বোনকে তুই... -তুমি মারা যাও নি? -মারা গিয়েছি।কিন্তু তোকে ছাড়া আমি শান্তিতে কিভাবে থাকি।তোকে নিতে এসেছি! -আমাকে নিতে? -হ্যা।এতদিন তো আমেরিকায় ছিলি।পাই নি তোকে।প্রতিশোধের নেশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। -প্রতিশোধ!কিসের প্রতিশোধ? -আমার বোনের প্রতিশোধ! শাহানারা বেগম বাড়ির পিছনে কিসের যেন আওয়াজ পেলেন।বিয়ের রঙিন বাতি জ্বলছে।তিনি বাড়ির পিছনে গেলেন।স্পষ্ট দেখতে পেলেন তার ছেলেকে।গলা কাটা অবস্থায় পড়ে আছে।একটি চিৎকার দিলেন,তারপর পাশে লেখাটা দেখে নিজেকে সামলে নিলেন।লোকজন জমা হয়ে গেছে।সবাই হতভম্ব।যা ভেবেছিল,তা হবে না ভেবেছিল।আজ তাই হয়েছে। নিলয় নিথর দেহ নিয়ে পড়ে আছে।অকৃ ছুরি দিয়ে তার গলা কেটে ফেলেছে,কণ্ঠনালি বের হয়ে ফোসফাস আওয়াজ হচ্ছে।তারপর বুকে,পেটে ছুরি ঢুকিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।বুকটা ফেড়ে হৃদপিন্ড বের করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে,তা এখনও জ্বলছে! তার রক্তে মাটির উপর খোদাই করে লেখা,"প্রতিশোধ!" অকৃ হাটছে।আজ হাটতে তার খুব ভালো লাগছে।খুব আনন্দ তার।প্রতিশোধ শেষ হয়েছে।সে এক নতুন মানুষ।আজ থেকে পৃথিবী তাকে নতুন ভাবে চিনবে।সে কোন সিরিয়াল কিলার নয়,সে এক মানব।অতি সাধারণ মানব।আবার মহাপুরুষ!এই সন্ধ্যায়,ল্যামপোস্টের আলোয় সেই লোকটার লেখা মনে পড়ছে অকৃর... "দেখ তাকিয়ে পথ শিশুদের মাঝে, নয়তো দেখ রাস্তায় বখাটেদের ভীড়ে! স্কুল,কলেজের ছেলেদের সাদা ইউনিফর্মে, দেখ অকৃ হাসছে,নিষ্পাপ শিশুর মনে! অকৃ মারা যায়নি! কথা বিশ্বাস হয়নি? অকৃ বেচে আছে সকল অস্তিত্বে, সকল অন্যায়,পাপ ধ্বংস করছে। সকল ধর্ষককে করছে খুন, অকৃ করে না কোন ভুল! শোনে রাখো, অকৃ হারায় নি! সবে শুরু হয়েছে ইতিহাস, অল্পে করবে না শেষ গল্প!" সমাপ্ত....
Tags:horror,story,ভুতের গল্প,ভুতপ্রেত,গল্প,ভূত,ভয়ংকর,ভূতের গল্প,পেতনি,গাছের ভূত,সিরিয়াল কিলার, অক দা সিরিয়াল কিলার,রেডিও,রেডিও ফুরতি,radio foorti,bhootfm,radiofoortibhootfm,bootfm story,Radio foorti,dangerous story,রাতের গল্প,rj rasel,rasel bootfm,rj rasel bhoot fm,rj rasel story,bhootfm story mp3 download,story mp3,রাসেল,অারজে রাসেল,ভূত এফএম,মারডার,kill,হত্যা,রহস্য,ভুত,জ্বিন,
0 মন্তব্যসমূহ